দৈনন্দিন জীবনে মানসিক ব্যায়ামের শক্তি ও প্রভাব

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
আজকের দ্রুত পরিবর্তিত বিশ্বে শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক সুস্থতা যেন এক নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা অনেকেই শরীরচর্চায় যত্ন নেই, কিন্তু মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য প্রায় উপেক্ষিত। নতুন গবেষণা বলছে, মস্তিষ্ককেও শরীরের মতোই নিয়মিত ব্যায়ামের প্রয়োজন, যা মানসিক ব্যায়াম নামে পরিচিত।
মানসিক ব্যায়াম বলতে বোঝায় মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ সক্রিয় করে এমন ক্রিয়াকলাপ যা স্মৃতি, মনোযোগ, বিশ্লেষণ ক্ষমতা ও সৃজনশীলতাকে জোরদার করে। এর মধ্যে গণিত সমস্যার সমাধান, ধাঁধা বা পাজল খেলা, নতুন ভাষা শেখা, বাদ্যযন্ত্র অনুশীলন, লেখালেখি, এবং এমনকি নিয়মিত মেডিটেশন ও ব্রেইন ট্রেনিং অ্যাপসের ব্যবহারও অন্তর্ভুক্ত।
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায়, এই ধরনের মানসিক অনুশীলন নিউরোপ্লাস্টিসিটি (neuroplasticity) বাড়ায়, যা মস্তিষ্কের নিউরন বা স্নায়ু কোষের নতুন সংযোগ তৈরি ও পুনর্গঠনকে উৎসাহিত করে।
এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মস্তিষ্ক নিজেকে পুনরায় গড়ে তোলে, ফলে বয়স বাড়ার সঙ্গে স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি কমে যায় এবং কগনিটিভ কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিভিন্ন মানসিক স্বাস্থ্য গবেষণায় উঠে এসেছে, নিয়মিত মানসিক ব্যায়াম যেমন আলঝেইমার রোগ ও অন্যান্য বয়সসংশ্লিষ্ট স্নায়ুতন্ত্রজনিত অসুখের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে, তেমনি উদ্বেগ ও হতাশার মাত্রাও হ্রাস করে। বিশেষ করে ধ্যান ও মনোযোগ ভিত্তিক মানসিক ব্যায়াম মস্তিষ্কে কর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা কমিয়ে মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়।
প্রযুক্তির আধুনিক যুগে আমরা সোশ্যাল মিডিয়া, মোবাইল অ্যাপ ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে বহুমুখী মনোযোগে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছি, যার কারণে ধারাবাহিক মনোযোগের সময় ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এর বিরূপ প্রভাব কাটিয়ে উঠতে নিয়মিত মস্তিষ্কের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।
তবে শুধু পাজল বা বই পড়াই নয়, জীবনের প্রতিদিনের কাজেও মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখা যায়। যেমন নতুন রান্নার রেসিপি শেখা, নতুন কোনো হবি শুরু করা, নতুন পথে হাঁটা বা কাজ করা-এসবই মস্তিষ্কের জন্য কার্যকর মানসিক ব্যায়াম হতে পারে।
✪ বিশেষ পরামর্শ: মানসিক ব্যায়াম শুরু করার জন্য দিনে অন্তত ২০-৩০ মিনিট সময় বরাদ্দ করুন। এর জন্য পাজল, ক্রসওয়ার্ড, নতুন ভাষার শব্দভান্ডার বৃদ্ধি, ধ্যান বা ব্রেইন ট্রেনিং গেম ব্যবহার করতে পারেন। ধীরে ধীরে এসব অভ্যাস আপনাকে মানসিকভাবে আরও সতেজ ও উৎপাদনশীল করে তুলবে।
শরীরের পাশাপাশি মস্তিষ্ককেও প্রয়োজন নিয়মিত 'ফিটনেস'। মানসিক ব্যায়াম হলো মস্তিষ্কের সুস্থতা বজায় রাখার শক্তিশালী হাতিয়ার, যা শুধু স্মৃতি ও মনোযোগই নয়, সার্বিক মানসিক স্বাস্থ্যকেও উন্নত করে। তাই আজ থেকেই শুরু করুন মস্তিষ্কের জন্য ব্যায়াম-নিজের জীবনের গুণগত মান উন্নয়নে এক নতুন অধ্যায়।
আপনার মস্তিষ্ককে দিন নিয়মিত 'ব্যায়ামের সুযোগ'-কারণ সুস্থ মস্তিষ্কই সুখী জীবন নিশ্চিত করে।