মাউন্ট এভারেস্ট জয় এত ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ কেন?

মাউন্ট এভারেস্ট জয় এত ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ কেন?
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট। হিমালয়ের এই গর্বিত চূড়ার উচ্চতা ৮,৮৪৮.৬ মিটার। বৈশ্বিক উষ্ণতা এবং বরফ গলে যাওয়ার ফলে প্রতি বছর এর উচ্চতা বেড়েই চলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে এভারেস্টের উচ্চতা প্রতি বছর গড়ে ২ সেন্টিমিটার করে বাড়ছে। এই পর্বত জয় করা মানেই শুধু একক স্বপ্ন নয়, এটি এক বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ—যা সাহস, শারীরিক সক্ষমতা, মানসিক দৃঢ়তা এবং বিপুল ব্যয়ের সমন্বয়ে পূরণ হয়।

১৯৫৩ সালে অ্যাডমন্ড হিলারি ও তেনজিং নোরগে প্রথমবারের মতো এভারেস্টের চূড়ায় পা রাখেন। সেই পথ ধরে হাঁটেন অসংখ্য মানুষ। বাংলাদেশ থেকে ২০১০ সালের ২৩ মে প্রথম এভারেস্ট জয় করেন মুসা ইব্রাহীম। এরপর একে একে নিশাত মজুমদার, ওয়াসফিয়া নাজরীন, এম এ মুহিত, খালেদ হোসেন, বাবর আলী এবং সর্বশেষ এই তালিকায় নিজের নাম লিখিয়েছেন একরামুল হাসান শাকিল।

তবে, এভারেস্ট জয় কোনো সোজা পথ নয়। শুরু থেকেই পর্বতারোহীদের প্রস্তুতি নিতে হয় মাসের পর মাস। শারীরিক ও মানসিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি দরকার হয় বাস্তব অভিজ্ঞতা। পাহাড়ের উচ্চতায় অক্সিজেনের স্বল্পতা, ঠাণ্ডা আবহাওয়া, বরফের ঝুঁকি এবং হিমবাহের ধস - সবই একজন পর্বতারোহীর জীবনের জন্য হুমকি হতে পারে। প্রতি বছর অসংখ্য পর্বতারোহী এই যাত্রায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ২০২৩ সালে প্রায় ৫ জন নিখোঁজ ও ১৮ জন প্রাণ হারান।

সাধারণত মে মাসকে এভারেস্ট আরোহণের উপযুক্ত সময় ধরা হয়। এই সময় আবহাওয়া অপেক্ষাকৃত স্থিতিশীল থাকে, বাতাস হ্রাস পায় এবং বরফ গলতে শুরু করে। তবে, বর্ষা বা তুষারঝড়ের মতো বিপর্যয় যেকোনো সময় পরিবর্তন আনতে পারে পরিকল্পনায়।
এভারেস্টে যাওয়ার মূল পথ মূলত দুইটি। একটি নেপালের দক্ষিণ রুট এবং অপরটি তিব্বতের উত্তর রুট। বেশিরভাগ পর্বতারোহী নেপালের কাঠমান্ডু হয়ে লুকলা গ্রাম থেকে যাত্রা শুরু করেন। লুকলা থেকে প্রায় দুই সপ্তাহ পায়ে হেঁটে পৌঁছাতে হয় এভারেস্ট বেস ক্যাম্পে।

বেস ক্যাম্পে পৌঁছানোর পরেই শুরু হয় মূল অভিযাত্রার প্রস্তুতি। এখানেই প্রায় দুই সপ্তাহ অবস্থান করে পর্বতারোহীরা পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেন এবং আবহাওয়ার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। এরপর শুরু হয় ধাপে ধাপে চূড়ার দিকে যাত্রা—যা সম্পূর্ণ করতে সময় লাগে প্রায় দুই মাস।

সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো খরচ। এভারেস্ট জয় করতে গড়ে ২৫ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যয় হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে—ক্লাইম্বিং পারমিট, গাইড, অক্সিজেন সিলিন্ডার, বিশেষ পোশাক, তাঁবু, স্লিপিং ব্যাগ, খাবারসহ আরও নানা খরচ। শুধু পারমিটের জন্যই দিতে হয় প্রায় দশ লাখ টাকা।

এই দীর্ঘ যাত্রা ও অত্যধিক ব্যয়ের পেছনে মূল কারণ এর দুর্গম পথ ও ব্যয়বহুল প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। যে কেউ চাইলেই এভারেস্ট জয়ের জন্য প্রচেষ্টা করতে পারেন, তবে অবশ্যই পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ  গ্রহণ করতে হবে। যথাযথ প্রশিক্ষণ গ্রহণ ব্যতীত কেউ এই দুর্গম যাত্রা শুরু করার সাহস করতে পারে না।

দিন যত গড়াচ্ছে এভারেস্ট জয়ের নেশা মানুষকে আরও ঘিরে ধরছে। কেউ কেউ একাধিকবারও এভারেস্ট জয় করেছেন। এত কষ্ট, সময় আর অর্থ ব্যয় করে মানুষ কেন ওঠে এভারেস্টে? এই চূড়া জয়ের নেশা কি কখনোই কমবে না? হয়তো কমবে না, কারণ এটাই যে এই পৃথিবীর সর্বোচ্চ স্থান, মাউন্ট এভারেস্ট!


সম্পর্কিত নিউজ