পিআর নির্বাচন পদ্ধতি আসলে কেমন?

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
পিআর বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন পদ্ধতি (Proportional Representation) এমন একটি ভোটদানের পদ্ধতি, যেখানে জাতীয় নির্বাচনে ভোটের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংসদে আসন বরাদ্দ দেওয়া হয় — ঠিক যত শতাংশ ভোট, তত শতাংশ আসন।
৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের আভাস মিলেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে গঠিত নির্বাচন সংস্কার কমিশন নতুন একটি নির্বাচন পদ্ধতি চালুর বিষয়ে ভাবনা শুরু করেছে। আলোচনায় উঠে এসেছে ‘আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন ব্যবস্থা’ বা পিআর।
এই পদ্ধতিতে প্রতিটি রাজনৈতিক দল সংসদে আসন পায় তাদের মোট প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো দল যদি ১০ শতাংশ ভোট পায়, তাহলে তারা মোট ৩০০ আসনের মধ্যে আনুপাতিকভাবে ৩০টি আসন পাবে। এতে করে প্রতিটি ভোট সংসদে গুরুত্ব পায়, যা বর্তমান ব্যবস্থায় অনেক সময় হয় না।
বিশ্বের অনেক দেশে পিআর নির্বাচন পদ্ধতি ব্যবস্থা চালু আছে। তন্মধ্যে জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, ইসরায়েল, দক্ষিণ আফ্রিকা বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। অনেক দেশ আবার মিশ্র পদ্ধতি ব্যবহার করে, যার মধ্যে একাংশ পিআর, অপর অংশ সরাসরি ভোট।
পিআর নির্বাচন পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য:
- জনগণের ভোটের প্রকৃত অনুপাত অনুযায়ী সংসদ গঠিত হয়।
- প্রতিটি ভোট কাজে লাগে— এমনকি ছোট দলগুলোরও প্রতিনিধিত্ব হয়।
- দলগুলো আগেই প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে।
- ভোট পড়ে দলের পক্ষে, ব্যক্তি প্রার্থীর পক্ষে নয়
উদাহরণ দিয়ে বোঝালে:
ধরুন, কোনো নির্বাচনে—
- দল ‘ক’ পেয়েছে ৪০% ভোট
- দল ‘খ’ পেয়েছে ৩০% ভোট
- দল ‘গ’ পেয়েছে ২০% ভোট
- দল ‘ঘ’ পেয়েছে ১০% ভোট
তাহলে ৩০০টি আসনের মধ্যে
- দল ‘ক’ পাবে ১২০টি আসন
- দল ‘খ’ পাবে ৯০টি আসন
- দল ‘গ’ পাবে ৬০টি আসন
- দল ‘ঘ’ পাবে ৩০টি আসন
জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন ও কমিউনিস্ট পার্টির মতো ছোট ও মাঝারি রাজনৈতিক দলগুলো পিআর পদ্ধতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তাদের মতে, এ পদ্ধতিতে সব দলেরই সংসদে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে। তবে বিএনপি এই পদ্ধতির বিরোধিতা করছে এবং প্রচলিত একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নির্ভর সংসদীয় পদ্ধতির পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে।
বর্তমানে প্রচলিত পদ্ধতিতে ৩০০টি আসনে আলাদাভাবে ভোট হয় এবং যিনি সবচেয়ে বেশি ভোট পান, তিনিই জয়ী হন। ফলে অনেক সময় ২৫ শতাংশ ভোট পেয়ে কেউ নির্বাচিত হন এবং বাকি ৭৫ শতাংশ ভোট কার্যত নিষ্প্রভ থাকে।
নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, “আনুপাতিক ব্যবস্থায় মেজরিটি ভোটারের মতামত প্রতিফলিত হয়। এটি সুশাসন নিশ্চিতেও ভূমিকা রাখতে পারে।”
অন্য এক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, “এই পদ্ধতি ছোট রাজনৈতিক দলগুলোকেও সুযোগ দেয় সংসদে উপস্থিতির। ফলে গণতন্ত্র আরও অংশগ্রহণমূলক হয়।”
পিআর নির্বাচন পদ্ধতি গণতন্ত্রকে আরও সমতাভিত্তিক, প্রতিনিধিত্বমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করে তোলে। তবে এর কার্যকারিতা নির্ভর করে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি, প্রশাসনিক দক্ষতা ও আইনি কাঠামোর ওপর। এই নতুন পদ্ধতি বাস্তবায়নের জন্য সব দলের ঐকমত্য প্রয়োজন। তবে ধীরে ধীরে বাংলাদেশ পিআর ভিত্তিক নির্বাচনের দিকে এগোতে পারে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।