কানে টানটান শব্দ? হতে পারে ভবিষ্যতের শারীরিক বিপদের সতর্ক

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
হঠাৎ করে এক মুহূর্তের জন্য কানে একটানা ঝিঁঝিঁ ধ্বনি, হুইসেল বা ঘণ্টাধ্বনির মতো শব্দ শুনতে পাওয়া—এই অভিজ্ঞতা অনেকেরই হয়। কেউ ভাবেন, 'মনে হয় কেউ মনে করছে আমাকে', আবার কেউ বিশ্বাস করেন, 'নিশ্চয় কিছু খারাপ ঘটবে।' কিন্তু আধুনিক মেডিকেল সায়েন্স বলছে-এমন কানে শব্দ শোনা একেবারে অবহেলার বিষয় নয়। এটি হতে পারে আপনার শরীরের গভীরে চলতে থাকা স্নায়বিক বা শ্রবণগত সমস্যার একটি প্রাথমিক সংকেত।
এই অভিজ্ঞতা বিজ্ঞানসম্মত নাম পেয়েছে Tinnitus (টিনিটাস)। এটি নিজে কোনো রোগ নয়, বরং শরীরের অভ্যন্তরে অন্য কোনো অসামঞ্জস্যের বহিঃপ্রকাশ।
টিনিটাস কী? শব্দের উৎস কোথায়?
টিনিটাস এমন এক অনুভূতি, যেখানে ব্যক্তি বাইরের কোনো বাস্তব শব্দ ছাড়াই কানে একটি নিরব, একটানা শব্দ শুনতে পান। এটি হতে পারে বাজনা, ফিসফিসানি, হুইসেল, এমনকি কখনো মেশিনের মত আওয়াজ।
মূলত এই শব্দ উৎপন্ন হয় কানের ভিতরের Cochlea ও স্নায়ু সংবেদী অংশে। যদি শ্রবণ কোষ বা শ্রবণ স্নায়ুতে ক্ষতি হয়, তবে মস্তিষ্ক 'সঠিক শব্দ সংকেত' না পেয়ে নিজে থেকেই কৃত্রিম আওয়াজ তৈরি করে ফেলে।
এই শব্দ কীসের ইঙ্গিত দেয়?
অসংখ্য গবেষণায় দেখা গেছে, টিনিটাস শরীরে নিচের যে কোনো সমস্যার আগাম ইঙ্গিত হতে পারে-
⇨ শ্রবণশক্তি হ্রাস: দীর্ঘদিন উচ্চ শব্দে এক্সপোজার, বয়সজনিত পরিবর্তন বা হেডফোন ব্যবহারের কারণে শ্রবণ কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হলে টিনিটাস হতে পারে।
⇨ উচ্চ রক্তচাপ বা রক্তপ্রবাহজনিত সমস্যা: শরীরের রক্ত চলাচলে অনিয়ম থাকলে (যেমন-হাইপারটেনশন), কানের ভেতর রক্তপ্রবাহের গর্জন ধরনের শব্দ শোনা যেতে পারে।
⇨ নিউরোলজিক্যাল ডিজঅর্ডার: মাইগ্রেন, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস বা ব্রেইনের নির্দিষ্ট অংশে কোষ ক্ষয় ঘটলেও এমন শব্দের অনুভূতি হয়।
⇨ ঘুম ও মানসিক চাপ: অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা অনিদ্রা মস্তিষ্কে কেমিক্যাল ভারসাম্য নষ্ট করে, যা টিনিটাসের জন্ম দিতে পারে।
⇨ ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু অ্যান্টিবায়োটিক, ব্যথানাশক ও হাইড্রোক্সাইক্লোরোকুইনের মতো ওষুধ টিনিটাসের কারণ হতে পারে।
বিপদের বার্তা না বুঝলে কী হয়?
টিনিটাস যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং সঙ্গে শ্রবণ সমস্যা, মাথা ঘোরা বা অস্থিরতা যুক্ত হয়—তবে তা হতে পারে বড় কোনো স্নায়বিক বা শারীরিক সমস্যার পূর্বলক্ষণ। অবহেলা করলে এটি স্থায়ী শ্রবণহীনতা বা মানসিক অবসাদে রূপ নিতে পারে।
সমাধান কী?
⇨ পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখা
⇨ উচ্চ শব্দ এড়িয়ে চলা ও ইয়ারফোন ব্যবহার সীমিত করা
⇨ ক্যালসিয়াম, ভিটামিন B12, জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাদ্য খাওয়া
⇨ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা
⇨ সম্ভাব্য কারণ শনাক্তে অডিওমেট্রি বা ইএনটি পরামর্শ গ্রহণ
কুসংস্কার নয়, বিজ্ঞানকে গুরুত্ব দিন
'কানে বাজা মানেই কেউ কথা বলছে'-এ ধরনের ধ্যানধারণা কেবল বিভ্রান্তি তৈরি করে। এই ছোট্ট শব্দই আপনার স্বাস্থ্য সচেতনতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সুতরাং, এই অভিজ্ঞতা উপেক্ষা না করে, তা ব্যাখ্যা করার জন্য বিজ্ঞান ও বাস্তবতাকে গুরুত্ব দিন।
কানে অদ্ভুত শব্দ শোনা-এটি কোনো অলৌকিক ঘটনা নয়। বরং এটি শরীরের অভ্যন্তরে চলমান কোনো জটিলতার সরল ভাষায় প্রকাশ। সুতরাং, যখনই এমন শব্দ শুনতে পান, সেটিকে কুসংস্কারের মোড়কে ঢেকে না রেখে সতর্কতার সঙ্গে গ্রহণ করুন। কারণ, এই শব্দ হতে পারে আপনার ভবিষ্যতের রোগ প্রতিরোধের প্রথম সতর্কঘণ্টা।