বইয়ের পাতা বিশ্বসাহিত্যে বিশ্বদৃষ্টির জানালা খুলে যায়

বইয়ের পাতা বিশ্বসাহিত্যে বিশ্বদৃষ্টির জানালা খুলে যায়
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

মানব সভ্যতার ইতিহাস ধরে সাহিত্য সবসময়ই এক ধরনের জানালা হয়ে এসেছে অন্য সংস্কৃতি, অন্য সমাজ ও অন্য দৃষ্টিভঙ্গি জানার জন্য। যখন আমরা কোনো দেশের সাহিত্য পড়ি, তখন শুধু একটা গল্পই পড়ছি না; আমরা ওই দেশের ইতিহাস, মানুষের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি, মূল্যবোধ এবং ভাবনা-চিন্তার সঙ্গে পরিচিত হচ্ছি। আধুনিক বিশ্বায়নের যুগে এই বৈচিত্র্যময় সাহিত্য পড়া আর তা থেকে শিক্ষা নেওয়া হয়ে উঠেছে বোধগম্যতার এক গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।

বিশ্বসাহিত্যের সমৃদ্ধ ভাণ্ডারে বিভিন্ন দেশ ও সংস্কৃতির বইগুলো পাঠকের চিন্তাধারাকে বিস্তৃত করে। যেমন, রুশ সাহিত্যে লিও টলস্টয় ও ফিওদর দস্তয়েভস্কির লেখা কাহিনীগুলো মানব মনের জটিলতা এবং সমাজের গভীর অসঙ্গতি তুলে ধরে। একইভাবে, জাপানি সাহিত্য পাঠককে আত্মসমীক্ষায় নিমগ্ন করায়, যেখানে হাইগু (haiku) কাব্যের সংক্ষিপ্ততা ও গভীরতা চমকে দেয়।

আফ্রিকান সাহিত্যে নাইজেরিয়ার চিমামান্ডা এনগোজি আদিচির লেখা যেমন নারীর অধিকার ও আধুনিকতাবাদী পরিবর্তনের বিষয়গুলো তুলে ধরে, তেমনি লাতিন আমেরিকার ম্যাজিক রিয়ালিজম পাঠককে বাস্তব ও কাল্পনিকের অসাধারণ সমন্বয়ে ভাসিয়ে নিয়ে যায়।

ভিন্ন ভাষার সাহিত্যের অনুবাদ এক সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সহজ ও ব্যাপক হওয়ায় আজ বিশ্বজুড়ে পাঠকরা বহুজাতিক সাহিত্য গ্রহণে উৎসাহী। ফরাসি, স্প্যানিশ, আরবি থেকে শুরু করে কোরিয়ান ও স্ক্যান্ডিনেভিয়ান সাহিত্যের বইগুলো এখন বিশ্বসাহিত্য প্রেমীদের প্রধান আকর্ষণ। এ ধরনের বই শুধু ভিন্ন দেশের গল্প বলেই না, বরং মানুষের অন্তর্দৃষ্টি ও মূল্যবোধে নানা মাত্রা যোগ করে, যা বিশ্বব্যাপী সংবেদনশীলতা ও সহনশীলতার বিকাশ ঘটায়।

বাংলাদেশে এই ট্রেন্ড দৃশ্যমানভাবে বেড়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, সাহিত্যচর্চার প্রতিষ্ঠান এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আন্তর্জাতিক সাহিত্য নিয়ে আলোচনা ও পাঠচক্র গড়ে উঠছে। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাহিত্য পাঠের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে, যা তাদের চিন্তাশৈলীকে বহুমাত্রিক করে তুলছে।

বইয়ের মাধ্যমে ভিন্ন দেশ ও সংস্কৃতির মানুষের অভিজ্ঞতা জানা শুধু জ্ঞান বৃদ্ধি নয়, বরং তা সহানুভূতি ও আন্তঃসাংস্কৃতিক সংযোগের পথ তৈরি করে। যখন আমরা অন্য দেশের লেখকদের কণ্ঠ শুনি, তখন সীমান্ত অদৃশ্য হয় এবং মানবিক বন্ধনের নতুন এক স্তর তৈরি হয়।

বিশ্বসাহিত্যে ডুবে পড়া মানে এক ধরনের 'মানবিক ভ্রমণ' যেখানে পাঠক নিজেকে এক সীমান্তের বাহিরে, অপর দেশের মননের মাঝে খুঁজে পায়। এটি আন্তর্জাতিক বোঝাপড়া ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য অপরিহার্য। সুতরাং, বইয়ের পাতায় পাতায় এক বিশ্বব্যাপী সংযোগের জন্ম, যা সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের সাহায্য করে।

বইয়ের মাধ্যমে অন্য দেশের সাহিত্য পড়া এক সময়ের বিলাসিতা নয়, বরং যুগোপযোগী এক প্রয়োজন। এটি আমাদের করে তোলে সচেতন, বিশ্বদৃষ্টি সম্পন্ন এবং মানবিক সম্পর্কের ব্যাপক বোধগম্যতাসম্পন্ন। তাই, সীমান্ত পেরিয়ে বইয়ের জগতে ভ্রমণ আজকের পাঠকের জন্য এক অনিবার্য অভিজ্ঞতা।


সম্পর্কিত নিউজ