আমের মিষ্টতা আর ওজনের রহস্য

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
গ্রীষ্মের মৌসুম মানেই বাজারে আমের রঙিন বাটি, আর তা নিয়েই চোখে পড়ে সাধারণ মানুষের প্রাণোচ্ছ্বাস। কিন্তু এই মিষ্টি ফলের প্রতি ভালোবাসার সঙ্গে একটা প্রশ্নও ঘুরপাক খায়-"আম কি আসলেই ওজন বাড়ায়?" বাস্তবতা জানা জরুরি, কারণ আমাদের খাদ্যাভ্যাস ও শরীরের মেটাবলিজমের ওপর ভিত্তি করেই ওজন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
আমের পুষ্টিগুণ ও শরীরের প্রভাব আমে থাকে প্রচুর পরিমাণ প্রাকৃতিক শর্করা, যা প্রধানত ফ্রুক্টোজ ও গ্লুকোজ থেকে গঠিত। ১০০ গ্রাম আমে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ ক্যালোরি থাকে, যা তুলনামূলকভাবে অন্যান্য ফলের থেকে একটু বেশি। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, ফ্রুক্টোজ অতিরিক্ত গ্রহণ হলে তা লিভারে যেয়ে ট্রাইগ্লিসারাইড (রক্তের চর্বি) বৃদ্ধি করতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে মেটাবলিক সিনড্রোম ও ইনসুলিন প্রতিরোধিতার ঝুঁকি বাড়ায়।
তবে আম শুধু চিনি নয়, এতে আছে প্রচুর ফাইবার, ভিটামিন A ও C, পটাসিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং কোষগুলোর ক্ষয় রোধ করে। ফাইবার হজম প্রক্রিয়া ধীর করে শরীরে শর্করার দ্রুত শোষণ কমায়, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
কীভাবে আম ওজন বাড়াতে পারে?
১. অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ: শরীরের দৈনিক ক্যালোরি চাহিদার চেয়ে বেশি ক্যালোরি গ্রহণ করলে সেই অতিরিক্ত ক্যালোরি জমে ওজন বাড়ায়।
২. অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস: যদি আম খাওয়ার সঙ্গে অন্য উচ্চক্যালোরি খাবার বেশি গ্রহণ হয়, তাহলে ওজন বৃদ্ধি অনিবার্য।
৩. শারীরিক কার্যক্রমের অভাব: কম গতিশীল জীবনযাপন হলে শরীর অতিরিক্ত ক্যালোরি ব্যবহার করতে পারে না, ফলে তা চর্বি হিসেবে জমে।
কাদের জন্য সতর্কতা জরুরি?
⇨ ডায়াবেটিস রোগীরা যেন বিশেষ সতর্ক থাকেন, কারণ আমের উচ্চ শর্করা রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি করতে পারে।
⇨ অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিরা আম খাওয়ার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখবেন।
কিন্তু আম কি একেবারে বাদ দেয়া উচিত?
না, আম স্বাস্থ্যকর একটি ফল। এর মধ্যে থাকা ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইবার শরীরের জন্য অপরিহার্য। বিশেষত শীতল আমে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন C-এর পরিমাণ বেশি, যা দেহের ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিক্যাল থেকে কোষ রক্ষা করে।
বিজ্ঞানের ভাষায়: মেটাবলিজম ও আম আমের ফ্রুক্টোজ লিভারে গিয়ে গ্লুকোজের মতো ইনসুলিন সিগন্যাল ছুঁড়ে না, তাই শরীরে চিনি গ্রহণের মতো হঠাৎ ইনসুলিন স্পাইক হয় না। কিন্তু অতিরিক্ত ফ্রুক্টোজ লিভারের ফ্যাট তৈরি বাড়ায়। এজন্য সামঞ্জস্য বজায় রেখে আম খাওয়া প্রয়োজন।
সুতরাং কেমন হবে সঠিক আম খাওয়ার নিয়ম?
১. দৈনিক ১ থেকে ২টি মাঝারি সাইজের আম খাওয়া নিরাপদ।
২. আম খাওয়ার সঙ্গে শরীরচর্চা ও পরিমিত খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা জরুরি।
৩. পুষ্টির ভারসাম্য রাখার জন্য অন্যান্য ফল ও সবজি সঙ্গে খেতে হবে।
আম মিষ্টি, সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর একটি ফল, যা পরিমিত খেলে শরীরের জন্য উপকারী। কিন্তু অতিরিক্ত খেলে শরীরের ক্যালোরি ভারসাম্য নষ্ট হয়ে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই সঠিক তথ্য আর সচেতনতা নিয়ে আম খাওয়া উচিত, যেখানে মিষ্টতার সঙ্গে থাকবে স্বাস্থ্যের সুরক্ষা।
আমের সঙ্গে ওজন নিয়ে মিথ্যার অবসান ঘটিয়ে আসল তথ্যের আলোকে খাদ্যাভ্যাস গড়াই এখন সময়ের দাবি।