খাদ্যে টেস্টিং সল্ট: স্বাদের পেছনে লুকানো বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্যঝুঁকি

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
বর্তমান রান্নাঘরের একগোছালো গোপনীয়তা হলো 'টেস্টিং সল্ট' বা মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট (MSG)। প্রায়শই আমাদের প্রিয় রান্নায় এই উপাদানটি ব্যবহার করা হয় স্বাদ বৃদ্ধির জন্য, তবে এর বৈজ্ঞানিক প্রভাব এবং স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি নিয়ে সচেতনতা কম থাকায় এটি ক্রমেই হয়ে উঠছে এক ঝুঁকির কারণ। চলুন, টেস্টিং সল্টের রহস্য উন্মোচন করি, তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা থেকে শুরু করে এর প্রভাব এবং নিরাপদ ব্যবহার সম্পর্কে।
টেস্টিং সল্ট কী?
টেস্টিং সল্ট বা MSG হলো একটি সোডিয়াম লবণজাতীয় যৌগ, যা প্রাকৃতিকভাবে বিভিন্ন খাবারে যেমন সয়া সস, পনির, টমেটোতে পাওয়া যায়। এটি খাবারে 'উমামি' স্বাদ যোগ করে-যা মিষ্টি, খারাপ বা টক স্বাদের বাইরে পঞ্চম স্বাদের সংজ্ঞা। MSG খাদ্যের স্বাদ বাড়িয়ে খাবারকে আরো রঙিন ও মুখরোচক করে তোলে।
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে MSG -
MSG মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটার হিসেবে কাজ করে না, তবে এটি স্বাদের রিসেপ্টরগুলোকে সক্রিয় করে মুখে একটি স্বতন্ত্র স্বাদ অনুভূত করে। ফলে খাবার খাওয়ার অভিজ্ঞতা বাড়ে। তবে MSG-এর অতিরিক্ত সেবন শরীরের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ মাত্রায় MSG খেলে শরীরে অস্থায়ী বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, যেমন মাথাব্যথা, ঘাম, মাথা ঘোরা, হার্টের দ্রুত স্পন্দন ইত্যাদি, যা 'চাইনিজ রেস্টুরেন্ট সিনড্রোম' নামে পরিচিত।
স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং সতর্কতা-
অত্যধিক MSG গ্রহণ স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে, বিশেষত যারা MSG-তে সংবেদনশীল তাদের ক্ষেত্রে। MSG-তে থাকা সোডিয়ামের অতিরিক্ত পরিমাণ উচ্চ রক্তচাপ এবং কিডনির ক্ষতির সম্ভাবনা বাড়ায়। শিশু, বয়স্ক ও শারীরিক দুর্বল ব্যক্তিদের জন্য MSG-এর অতিরিক্ত ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন (FAO) MSG-র দৈনিক গ্রহণযোগ্য মাত্রা নির্ধারণ করেছে। সাধারণত ০ থেকে ৩০ মিলিগ্রাম প্রতি কেজি শরীর ওজনের মধ্যে MSG গ্রহণ নিরাপদ মনে করা হয়। তবে বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত খাবারে MSG-এর মাত্রা বাড়ার কারণে অজান্তে বেশি গ্রহণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে প্রক্রিয়াজাত খাবারের বাজার বাড়ার সাথে সাথে MSG-এর ব্যবহারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে খাদ্য নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে এখনো পর্যাপ্ত তথ্যের অভাব রয়েছে। ফলে অনেক মানুষ অজান্তে বেশি MSG গ্রহণ করছে, যা ভবিষ্যতে জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
নিরাপদ ব্যবহারের পরামর্শ-
⇨ রান্নায় MSG ব্যবহার সীমিত রাখা উচিত, যেন খাবারের প্রকৃত স্বাদ নষ্ট না হয়।
⇨ প্রক্রিয়াজাত ও ফাস্ট ফুড কম খাওয়া উচিত।
⇨ শিশু এবং সংবেদনশীল ব্যক্তিদের MSG যুক্ত খাবার থেকে দূরে রাখা উচিৎ।
⇨ খাদ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে MSG ব্যবহারের পরিমাণ নির্ধারণ ও লেবেলে স্পষ্ট উল্লেখ করতে হবে।
টেস্টিং সল্ট বা MSG স্বাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও, এটি ব্যবহারে সচেতনতা ও পরিমিতি অপরিহার্য। খাদ্যের স্বাদ ও স্বাস্থ্য-দুটি মিলে চললে জীবন হবে সুস্বাদু ও নিরাপদ। আধুনিক খাদ্যসংস্কৃতিতে MSG-এর ব্যবহার বাড়লেও, এর প্রভাব ও ঝুঁকি বোঝা ও নিয়ন্ত্রণ করা সময়ের দাবি। স্বাস্থ্যসচেতনতা এবং সঠিক তথ্যের মাধ্যমে আমরা সুস্থ খাদ্যাভ্যাস নিশ্চিত করতে পারি।