ক্ষুধা না অভ্যাস? খাওয়ার আগে চিন্তা করুন

ক্ষুধা না অভ্যাস? খাওয়ার আগে চিন্তা করুন
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

ক্ষুধা-সর্বজনবিদিত একটি অনুভূতি, যা প্রাচীনকাল থেকে মানুষের বেঁচে থাকার প্রধান চাবিকাঠি। কিন্তু আধুনিক জীবনের জটিলতায় এই সাধারণ মনে হওয়া প্রক্রিয়াটি এখন বিজ্ঞানীদের জন্যও এক রহস্যের অধ্যায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আসলেই কি ক্ষুধা শুধু পেটের সংকেত? নাকি মস্তিষ্কের একটি জটিল এবং সূক্ষ্ম সংকেত?

ক্ষুধার বৈজ্ঞানিক পরিমাপ

শরীরের খাদ্যচাহিদার জন্য ক্ষুধা গুরুত্বপূর্ণ একটি সংকেত। আমাদের দেহে গ্লুকোজের মাত্রা কমে গেলে মস্তিষ্কে থাকা 'হাইপোথ্যালামাস' অঞ্চল দ্রুত সাড়া দেয়। এটি 'ঘ্রেলিন' নামক হরমোন নিঃসরণ করে, যা আমাদের ক্ষুধার অনুভূতি তৈরি করে। বিপরীতে, খাবার খাওয়ার পর 'লেপটিন' ও 'ইনসুলিন' হরমোন মস্তিষ্ককে জানায় যে, পর্যাপ্ত পুষ্টি হয়েছে এবং ক্ষুধা শ্লথ হয়ে গেছে। এই জৈবিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আমাদের শরীরের শক্তি ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
 

ক্ষুধার প্রকৃত এবং মানসিক মুখোশ

তবে শুধু শরীরের চাহিদা নয়, আজকের আধুনিক জীবনযাত্রায় 'ক্ষুধা' অনেক সময় হয়ে উঠছে একটি মানসিক বা আবেগগত সংকেত। যেমন, স্ট্রেস, ক্লান্তি বা মন খারাপের সময় আমরা অনেকেই খাবারে ভরসা নিতে চাই। মনস্তাত্ত্বিক ক্ষুধা আমাদের খাদ্যাভ্যাসে প্রভাব ফেলে, যা প্রাত্যহিক ওজন বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে, এমন ক্ষুধা প্রাথমিক ক্ষুধার মতো না হলেও অতিরিক্ত খাবারের দিকে পরিচালিত করে।
 

পরিবেশ ও অভ্যাসের প্রভাব

টিভি, মোবাইল, কিংবা কম্পিউটার স্ক্রিনের সামনে বসে থাকলে অনেক সময় মস্তিষ্ক আবেগগত ক্ষুধার ফাঁদে পড়ে। বিজ্ঞানের ভাষায় এটি 'কন্ডিশন্ড হান্টিং'-অর্থাৎ, নির্দিষ্ট পরিবেশে খাবারের প্রতি আগ্রহ বাড়ানো। খাদ্যের সুবাস, বিজ্ঞাপন কিংবা সামাজিক উৎসব এই অভ্যাসকে আরও জোরদার করে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এই প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে।
 

ক্ষুধার সংকেতের বিভ্রান্তি: স্বাস্থ্যঝুঁকি

অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এবং মানসিক ক্ষুধার কারণে স্থূলতা, হৃদরোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে বিশ্বব্যাপী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, অপ্রয়োজনীয় ক্যালোরি গ্রহণ এবং অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস অনেক ক্ষেত্রে এই রোগগুলোর প্রধান কারণ।
 

ক্ষুধার সংকেত বুঝে সুস্থ থাকা সম্ভব

বিশ্বের বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ক্ষুধা আসার পর ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করে পানি পান করলে প্রকৃত ক্ষুধা এবং মানসিক ক্ষুধার পার্থক্য বোঝা যায়। প্রকৃত ক্ষুধা হলে সেই সময়েও খাবারের ইচ্ছা থাকে, অন্যথায় তা হয় আবেগগত প্রবণতা।
 

সুস্থ খাদ্যাভ্যাসের জন্য করণীয়

১। নিয়মিত এবং সুষম খাবার গ্রহণ

২। পর্যাপ্ত পানি পান

৩। পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ

৪। অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাদ্য এবং চিনিযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলা

৫। খাবারের সময় মনোযোগী হওয়া, যেমন মোবাইল বা ৬। টিভি না দেখা
 

ক্ষুধা এখন শুধুমাত্র পেটের সংকেত নয়, এটি মস্তিষ্কের এক জটিল ভাষা। আমরা যত বেশি বুঝতে পারব এই সংকেতের প্রকৃত তাৎপর্য, তত সহজ হবে সুস্থ থাকা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন। আধুনিক জীবনের চাপে ক্ষুধার বিভ্রান্তিকর সংকেতগুলোকে চিনতে শিখুন, এবং নিজের খাদ্যাভ্যাসে সচেতন পরিবর্তন আনুন।


সম্পর্কিত নিউজ