কীভাবে বই পড়া আপনার ভাষাগত দক্ষতাকে নতুন মাত্রা দেয়!!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
ভাষা হচ্ছে মানুষের ভাব প্রকাশের শক্তিশালী মাধ্যম, আর এই ক্ষমতা বিকাশে বই পড়ার গুরুত্ব অপরিসীম। আধুনিক ভাষাবিজ্ঞান ও স্নায়ুবিজ্ঞান গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত বই পড়া শুধু শব্দের পরিচয়ই দেয় না, বরং মস্তিষ্কের ভাষাগত প্রক্রিয়াগুলিকে গভীরভাবে সক্রিয় করে। এতে ভাষার জটিলতা বুঝতে, সঠিক বাক্য গঠন করতে এবং নতুন শব্দের যথার্থ ব্যবহার করতে সহায়তা হয়।
মানব মস্তিষ্কের ভাষা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত 'ব্রোকা' এবং 'ওয়েনিকি' এরিয়া, যখন আমরা বই পড়ি, তখন অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে ওঠে। 'ব্রোকা এরিয়া' বাক্য গঠন ও উচ্চারণ নিয়ন্ত্রণ করে, আর 'ওয়েনিকি এরিয়া' ভাষার অর্থ বোঝার জন্য দায়ী। এই দুই অঞ্চলের সক্রিয়তা বাড়ার মাধ্যমে মানুষের ভাষাগত দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
বইয়ের ভাষা লিখিত ও সুশৃঙ্খল হওয়ায়, এটি আমাদের বাক্যগঠনে প্রভাব ফেলে। দৈনন্দিন কথোপকথনের তুলনায় বইয়ের ভাষা অনেক বেশি বৈচিত্র্যময় ও সমৃদ্ধ হয়-যেমন রূপক, উপমা, অলঙ্কার, এবং বিভিন্ন ব্যাকরণিক কাঠামো। ফলে পড়ার মাধ্যমে শব্দের গভীরতা, অর্থবোধ এবং প্রাসঙ্গিকতা উপলব্ধি করতে পারি।
শব্দভাণ্ডারের প্রসার বইয়ের অন্যতম বড় সুবিধা। বিভিন্ন বিষয়ের বই পড়া, যেমন বিজ্ঞান, ইতিহাস, সাহিত্য বা সমাজবিজ্ঞান, নতুন নতুন শব্দ ও ধারণার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। নতুন শব্দ শিখলে তা মস্তিষ্কে স্থায়ী হয় এবং বিভিন্ন প্রসঙ্গে ব্যবহার করা সহজ হয়। এই প্রক্রিয়াকে 'ভোকাবুলারি অ্যাকুইজিশন' বলে ভাষাবিজ্ঞানীরা।
বই পড়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো মস্তিষ্কের 'ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং' বা সমালোচনামূলক চিন্তাধারার বিকাশ। ভালো পাঠক বইয়ের বিষয়বস্তু নিয়ে প্রশ্ন করে, ভাবনাচিন্তা করে, তা অন্যান্য তথ্যের সঙ্গে তুলনা করে। এর ফলে ভাষার ব্যবহার আরও পরিশীলিত হয়।
শিশুদের ক্ষেত্রে বই পড়া ভাষার প্রাথমিক বিকাশের জন্য বিশেষভাবে কার্যকর। নতুন শব্দ শেখা, বাক্য গঠন বুঝতে পারা, উচ্চারণে নিখুঁত হওয়া-এসবই বইয়ের মাধ্যমে সহজ হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুরা যত বেশি পড়বে, তাদের ভাষাগত দক্ষতা তত দ্রুত ও গভীরভাবে উন্নত হবে।
এক কথায়, বইয়ের ভাষা শিক্ষার প্রক্রিয়া হল এক ধরনের মস্তিষ্ক ব্যায়াম। বইয়ের প্রতিটি শব্দ, বাক্য এবং অনুচ্ছেদ মস্তিষ্ককে নতুনভাবে চিন্তা করতে বাধ্য করে, যা ভাষার গঠন ও ব্যবহারকে উন্নত করে।
সুতরাং, ভাষা দক্ষতা বাড়াতে বই পড়া শুধু বিকল্প নয়, এটি একটি অপরিহার্য উপায়। বইয়ের মাধ্যমে না শুধু নতুন শব্দ শেখা যায়, বরং ভাষার সৌন্দর্য ও জটিলতাও বোঝা যায়, যা এক কথায় জীবনকে করে তোলে সমৃদ্ধ ও অর্থবহ।