অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে: সুবিধার আড়ালে লুকানো ঝুঁকি ও আধুনিক নিরাপত্তার হাতিয়ার

অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে: সুবিধার আড়ালে লুকানো ঝুঁকি ও আধুনিক নিরাপত্তার হাতিয়ার
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

বর্তমান বিশ্বে ডিজিটাল অর্থ লেনদেন বা অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহারের প্রসার অভূতপূর্ব। ব্যাংকিং থেকে শুরু করে ই-কমার্স, বিল পরিশোধ থেকে মোবাইল রিচার্জ-সবকিছুই এখন হাতের মুঠোয়। বাংলাদেশেও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস, ক্রেডিট-ডেবিট কার্ড এবং বিভিন্ন পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়ে থাকে। তবে সুবিধার সঙ্গে জড়িত রয়েছে সাইবার নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ, যা জানলেই ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে কী?

একটি পেমেন্ট গেটওয়ে হল ডিজিটাল মাধ্যম, যা ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে অর্থের লেনদেনকে সহজ ও দ্রুত করে। এটি ব্যবহারকারীর কার্ড বা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে তথ্য নিয়ে সরাসরি পেমেন্ট প্রসেসর বা ব্যাংকের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে লেনদেন সম্পন্ন করে। সুতরাং, এটি একটা 'ডিজিটাল সেতু', যা নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য হলে লেনদেন ঝামেলা মুক্ত হয়।
 

ঝুঁকির মূল কারণসমূহ

১. ফিশিং (Phishing): ব্যবহারকারীদের ভুল তথ্য প্রবেশ করানো হয় ভুয়া ওয়েবসাইট বা ইমেইল লিংকের মাধ্যমে, যেখান থেকে ব্যক্তিগত তথ্য ও পাসওয়ার্ড হাতিয়ে নেয়া হয়। অনেক সময় দেখতে প্রায় একই রকম হলেও এগুলো মূল ওয়েবসাইটের নকল।

২. ম্যালওয়্যার ও স্পাইওয়্যার: কম্পিউটার বা স্মার্টফোনে সংক্রমিত হওয়া ম্যালওয়্যার গোপনভাবে তথ্য চুরি করে। বিশেষ করে পাবলিক ওয়াই-ফাইতে সংযুক্ত হয়ে অনলাইন লেনদেন করলে ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।

৩. ডাটা এনক্রিপশন না থাকা: যখন পেমেন্ট গেটওয়ে এনক্রিপশন ব্যবহার করে না, তখন তথ্য ইন্টারসেপ্ট করা সহজ হয়। এই কারণেই SSL/TLS প্রোটোকলের মাধ্যমে তথ্য প্রেরণ অপরিহার্য।

৪. দুর্বল পাসওয়ার্ড ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা: একই পাসওয়ার্ড বারবার ব্যবহার, দুই ধাপের যাচাইকরণ বন্ধ রাখা বা পাসওয়ার্ড শেয়ার করা ব্যবহারকারীদের ঝুঁকিতে ফেলে।
 

নিরাপত্তার আধুনিক হাতিয়ার

১। দুটি-ধাপ যাচাইকরণ (Two-Factor Authentication): ব্যবহারকারীর পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য পাসওয়ার্ডের পাশাপাশি একটি অতিরিক্ত কোড বা বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন প্রয়োজন হয়।

২। এনক্রিপশন ও SSL সার্টিফিকেট: তথ্য প্রেরণের 

সময় ডাটা এনক্রিপ্টেড করা হয়, যাতে তা তৃতীয় পক্ষ সহজে পড়ে না।

৩। টোকেনাইজেশন (Tokenization): ব্যাংক বা পেমেন্ট গেটওয়ে কার্ড তথ্য সরাসরি সংগ্রহ না করে একটি নিরাপদ টোকেনে রূপান্তর করে, যা প্রকৃত তথ্যের বিকল্প হিসেবে কাজ করে।

৪। সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা: ব্যবহারকারী এবং প্রতিষ্ঠান উভয়কেই নিয়মিত সচেতন ও আপডেট থাকতে হয় সাইবার থ্রেট ও ঝুঁকির বিষয়ে।
 

ব্যবহারকারীর করণীয়

১। সর্বদা নিশ্চিত হতে হবে ওয়েবসাইটের URL এ 'https' ও প্যাডলক চিহ্ন আছে কিনা।

২। পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহার এড়িয়ে চলা উচিত।

৩। পাসওয়ার্ড শক্তিশালী ও নিয়মিত পরিবর্তন করা প্রয়োজন।

৪। সন্দেহজনক লিংকে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকা।

৫। পরিচিত ও বৈধ পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করা।
 

পরিশেষে, অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে আধুনিক আর্থিক লেনদেনকে সহজ ও দ্রুত করেছে। তবে প্রযুক্তির এই সুবিধা নিতে চাইলে নিরাপত্তার বিষয়ে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। সচেতনতা আর উন্নত সাইবার নিরাপত্তা প্রযুক্তির সমন্বয়ে এ ঝুঁকি অনেকাংশেই কমানো সম্ভব। ডিজিটাল অর্থনীতি যত দ্রুত এগোবে, ততই অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করতে হবে।


সম্পর্কিত নিউজ