ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কোন ফল উপকারী আর কোনটি ক্ষতিকর?

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
ডায়াবেটিস-যা আজ বিশ্বব্যাপী ৫ শতকের বেশি মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করছে-এই রোগের প্রধান নিয়ন্ত্রণ হাতিয়ার হলো খাদ্য। বিশেষত ফল খাওয়া নিয়ে ডায়াবেটিস রোগীদের অনেক প্রশ্ন থাকে। কারণ, ফল সাধারণত স্বাস্থ্যকর হলেও এর মধ্যে লুকিয়ে থাকতে পারে প্রাকৃতিক চিনির এমন পরিমাণ যা রক্তে শর্করার মাত্রা তীব্রভাবে বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই সঠিক ফল নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি।
কেন ফলের চিনির প্রকার এবং পরিমাণ গুরুত্বপূর্ণ?
ফলের মধ্যে মূলত থাকে গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ ও সুক্রোজ—প্রাকৃতিক শর্করা। তবে এই শর্করাগুলো রক্তে কত দ্রুত ও কতটা বৃদ্ধি ঘটায়, তা নির্ভর করে ফলের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) ও গ্লাইসেমিক লোড (GL) এর ওপর।
⇨ GI হলো সেই মাপকাঠি যা বলে দেয় কোনো খাবার রক্তে চিনির মাত্রা কত দ্রুত বাড়ায়।
⇨ GL বিবেচনা করে পরিমাণসহ সেই প্রভাবকে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আদর্শ ফল হবে যাদের GI এবং GL উভয়ই কম বা মাঝারি।
ডায়াবেটিসের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ফলসমূহ:
⇨ বেরি জাতীয় ফল: স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, রাস্পবেরি ইত্যাদি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ফাইবার ও ভিটামিন C-তে সমৃদ্ধ। এদের GI খুব কম (২০-৪০), যা রক্তে চিনির মাত্রা ধীরে বৃদ্ধি করে। গবেষণায় দেখা গেছে, বেরি জাতীয় ফল নিয়মিত খেলে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।
⇨ আপেল ও নাশপাতি: খোসাসহ খেলে ফাইবার গ্রহণ বাড়ে, যা পেট ভরে রাখে এবং রক্তে চিনির স্তর নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
⇨ কমলা, মাল্টা: ভিটামিন C ও ফ্ল্যাভোনয়েডসের ভালো উৎস, GI ৪০-৫০ এর মধ্যে। ফল হিসেবে সেগুলো হালকা মিষ্টি স্বাদের হলেও রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ায় না।
⇨ আমলকি: রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক, এবং শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
⇨ জাম: কম GI ফল যা রক্তে চিনির স্থিতিশীলতা বজায় রাখে।
সাবধানতার সঙ্গেই এড়িয়ে চলুন:
⇨ কাঁঠাল ও আম: পাকা আম ও কাঁঠালে থাকে প্রচুর পরিমাণ গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ, যার GI ৬০-৭০ পর্যন্ত হতে পারে। রক্তে দ্রুত চিনির মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
⇨ আনারস ও লিচু: উচ্চ চিনির ঘনত্বের জন্য এগুলো তাড়াতাড়ি রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
⇨ পাকা কলা: পরিপক্বতার সঙ্গে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়, তাই মাত্রামতো খাওয়া উচিত।
⇨ খেজুর: অত্যন্ত মিষ্টি, তাই অতিরিক্ত খাওয়া রক্তে শর্করার মাত্রা ঝটপট বাড়িয়ে দেয়।
ফলের খাওয়ার সময় এবং পদ্ধতি:
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য শুধু ফল বাছাই করাই যথেষ্ট নয়, খাওয়ার সময়ও গুরুত্বপূর্ণ। খাবারের সাথে বা খাবারের পরে খেলে রক্তে চিনির মাত্রার ওঠানামা কম হয়। খাবারের আগে খেলে রক্তে গ্লুকোজ দ্রুত বেড়ে যেতে পারে। এছাড়াও ফল খাওয়ার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত জরুরি-প্রতিদিন ১ থেকে ২টি মাঝারি আকারের ফল অথবা ১৫০-২০০ গ্রাম ফল যথেষ্ট।
বিজ্ঞান ও পুষ্টিবিদের পরামর্শ:
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ও বিভিন্ন পুষ্টিবিদ বলছেন, ডায়াবেটিস রোগীরা ফলের প্রতি গুছিয়ে আসা বোধ রাখতে হবে। খুব মিষ্টি ফল বা অতিরিক্ত ফল খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। ফলে থাকা ফাইবার, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও খনিজ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হলেও চিনির মাত্রা খেয়াল না রাখলে বিপদ ঘটতে পারে।
ফল ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একদিকে যেমন সুস্থতার উপাদান, অন্যদিকে ভুল নির্বাচন করলে শত্রুতাও বটে। সচেতন ও বৈজ্ঞানিক পন্থায় ফল বেছে নিলে, জীবন হবে সুস্থ ও আনন্দময়। ডায়াবেটিস মানে ফল থেকে দূরে থাকা নয়, বরং বুদ্ধিমানের সঙ্গেই ফলকে খাদ্য তালিকার অংশ করা।
"সঠিক ফল নির্বাচন, সুস্থ জীবন নিশ্চিত!"