জাতীয় বাজেট ২০২৫: কোথায় বরাদ্দ বেশি, কোথায় কম?

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
২০২৫ সালের জাতীয় বাজেট দেশের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ গড়ার এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে দাঁড়িয়েছে। সরকারি রাজস্ব-ব্যয়ের সূক্ষ্ম হিসাব-নিকাশের পেছনে রয়েছে দেশের বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার পরিকল্পনা। কিন্তু এই বাজেটে কিছু বিষয় নতুন আশা জাগালো।
অবকাঠামোর আধুনিকীকরণ: দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ডে নতুন শক্তি
২০২৫ সালের বাজেটে অবকাঠামো খাতের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে মোট বাজেটের প্রায় ২২%—যা গত বছর থেকে প্রায় ৫% বৃদ্ধি। বিশেষ করে সড়ক ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণের জন্য বরাদ্দ রয়েছে বিশাল অঙ্ক। বাংলাদেশে যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প খাতকে গতিশীল করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ খাতে বিনিয়োগে এক বিশাল ঢেউ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে, যা দেশের বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
⇨ শিক্ষা খাত: বরাদ্দ বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত গতি নেই
জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতের বরাদ্দ বেড়েছে, কিন্তু মোট বাজেটের মাত্র ১২.৫%—এখনোই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশকৃত ১৫-২০% পর্যায়ের নিচে। প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিকায়নের জন্য বরাদ্দ কম থাকায় শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি এবং অবকাঠামো উন্নয়নে সীমাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে। প্রযুক্তির যুগে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার জন্য এই বরাদ্দ যথেষ্ট না হওয়ায় বিশেষজ্ঞরা সতর্ক।
⇨ স্বাস্থ্য খাত: কোভিড পরবর্তী প্রস্তুতির চ্যালেঞ্জ
স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে মোট বাজেটের ১০% এর কাছাকাছি, যা সাম্প্রতিক মহামারীর পরিপ্রেক্ষিতে তুলনামূলক কম বলা যায়। চিকিৎসা সেবা সম্প্রসারণ, হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর আধুনিকায়ন, এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য বরাদ্দ কম থাকায় দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বড় ধরনের সংস্কারের জন্য বাজেটটি সীমাবদ্ধ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
⇨ কৃষি ও প্রযুক্তি: নতুন দিগন্তের সন্ধানে
কৃষিক্ষাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে মোট বাজেটের প্রায় ৮%, যেখানে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি, সেচ ব্যবস্থা, এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বিনিয়োগ বাড়ানো হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ হয়েছে মোট বাজেটের ৬%, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে স্টার্টআপ এবং প্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ অনুদান রাখা হয়েছে।
⇨ সামাজিক সুরক্ষা: বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ
বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ও অন্যান্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বরাদ্দ সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু এর মাত্রা জাতীয় অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। রেমিট্যান্স নির্ভর পরিবারের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য সরকারি উদ্যোগের অভাব বাজেটের একটি দুর্বল দিক।
⇨ ঋণ পরিশোধ ও বাজেটের ভারসাম্য
সরকারের পূর্ববর্তী ঋণ পরিশোধ ও সুদের বোঝা এখনও ভারী। বাজেটের প্রায় ৩০% অংশ চলে ঋণ পরিশোধ ও সুদের জন্য, যা নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ঋণের ভারসাম্য ঠিক রাখা এক বড় চ্যালেঞ্জ।
সংক্ষেপে, ২০২৫ সালের বাজেট দেশের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন লক্ষ্যকে সামনে রেখে অবকাঠামো ও প্রযুক্তিতে জোর দিয়েছিল। কিন্তু স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তার মতো মানবসম্পদ খাতে বরাদ্দ কম হওয়ায় দেশের মানব উন্নয়ন সূচকে প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাজেট বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা, কার্যকর প্রশাসনিক পরিকল্পনা ও জবাবদিহিতা থাকলে এটি দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতির জন্য এক শক্ত ভিত্তি হতে পারে।