কলা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়ে না কমে!!

কলা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়ে না কমে!!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

কলা, পৃথিবীর সর্বাধিক পরিচিত ও প্রিয় ফলগুলোর মধ্যে একটি। স্বাদে মিষ্টি, পুষ্টিতে সমৃদ্ধ এই ফলটি আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু কোষ্ঠকাঠিন্য বা বদহজমের সমস্যা নিয়ে যে প্রশ্ন ঘুরপাক খায়-"কলা খাওয়া কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়ায় না কমায়?"-তা এখনও অনেকের কাছে অস্পষ্ট। কলা আসলে এক নয়, দুই রূপে আমাদের খাবারে আসে-সবুজ কলা ও পাকা কলা। এই দুইয়ের রসায়নিক গঠন এবং শরীরের ওপর প্রভাব ভিন্ন।

সবুজ কলার প্রভাব: সবুজ কলায় থাকে প্রচুর পরিমাণে 'রেসিস্ট্যান্ট স্টার্চ' বা প্রতিরোধক শর্করা। এই শর্করা সহজে হজম হয় না, বরং এটি অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ধীরে ধীরে ভেঙে যায়। ফলে হজমে সময় লাগে বেশি এবং অন্ত্রের পেরিস্টালসিস অর্থাৎ পেশীর সংকোচন কমে যেতে পারে। এজন্য কিছু ক্ষেত্রে সবুজ কলা অতিরিক্ত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রকোপ বাড়তে পারে, বিশেষ করে যাদের ইতিমধ্যে অন্ত্রসংক্রান্ত সমস্যা আছে তাদের জন্য। তবে রেসিস্ট্যান্ট স্টার্চ অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়কও হতে পারে, কারণ এটি 'প্রোবায়োটিক' হিসেবে কাজ করে ভাল ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে।

পাকা কলার গুণাগুণ: অন্যদিকে, পাকা কলায় রয়েছে উচ্চমাত্রায় দ্রবণীয় আঁশ, বিশেষত পেকটিন, যা অন্ত্রে জল ধরে রাখে এবং মলকে নরম ও সহজে উত্তরণযোগ্য করে তোলে। এতে কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকি কমে। সাথে থাকে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম, যা অন্ত্রের পেশীর স্বাভাবিক সংকোচনে সহায়তা করে, ফলে খাদ্যদ্রবণ স্বাভাবিক থাকে। এছাড়াও, পাকা কলায় থাকা প্রাকৃতিক চিনিগুলো দ্রুত এনার্জি দেয় এবং হজমে সহায়ক।

পরিমাণ ও খাওয়ার সময়ের গুরুত্ব: যেকোন খাবারের মতো কলাও পরিমিতিতে সেবন করলে উপকার বহুগুণ। অতিরিক্ত খেলে গ্যাস, ফোলাভাব বা অন্যান্য অস্বস্তি হতে পারে। বিশেষত সকালে খালি পেটে পাকা কলা খাওয়ার পরামর্শ অনেক পুষ্টিবিদ দেন, কারণ এটি হজমে সহায়তা করে এবং পেট পরিষ্কার রাখে।

বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিভঙ্গি: বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার জলবায়ুতে কলা সহজলভ্য এবং খরচেও সাশ্রয়ী। তাই কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সাধারণ সমস্যা প্রতিরোধে কলাকে খাদ্যতালিকায় রাখা যুক্তিযুক্ত। তবে কারও যদি কোষ্ঠকাঠিন্য বা হজমজনিত সমস্যা থেকে থাকে, তাহলে প্রথমে তাদের নিজের দেহের প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করাই উত্তম।
 

সারসংক্ষেপ:

⇨ সবুজ কলা: রেসিস্ট্যান্ট স্টার্চের কারণে কিছু ক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়াতে পারে।

⇨ পাকা কলা: উচ্চ আঁশ ও পটাশিয়াম দ্বারা কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়।
 

ব্যক্তিগত পার্থক্য এবং পরিমাণ বিবেচনা করা জরুরি।

কলা নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণাগুলো দূর করে এটি সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা এবং প্রয়োজনে স্বাস্থ্যকরভাবে খাদ্যাভ্যাসে ব্যবহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

নিরাপদ স্বাস্থ্য ও সুস্থ অন্ত্রের জন্য, কলাকে সঠিকভাবে জানুন, সঠিকভাবে খান!


সম্পর্কিত নিউজ