ক্যান্সার প্রতিরোধে জাদুকরী ৫টি ফল

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
শরীরের কোষগুলো প্রতিদিন অক্সিজেন ব্যবহার করে জীবনধারা চালায়, তবে সেই প্রক্রিয়ায় মুক্ত র্যাডিক্যাল নামের ক্ষতিকর রাসায়নিক তৈরি হয়। এগুলো কোষের ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত করে, যার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব হিসেবে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন জটিল রোগের ঝুঁকি বাড়ে। এই অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে কোষকে সুরক্ষায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এক ধরণের 'প্রাকৃতিক ঢাল' হিসেবে কাজ করে। যদিও বাজারে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ অনেক সাপ্লিমেন্ট পাওয়া যায়, কিন্তু প্রকৃতির দান-ফলমূল থেকেই এই উপাদানগুলো গ্রহণ করা সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকর।
বৈজ্ঞানিক গবেষণায় নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, নির্দিষ্ট কিছু ফলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান শরীরের কোষগুলোকে ফ্রি র্যাডিক্যালের ক্ষতি থেকে বাঁচিয়ে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
চলুন জেনে নেই এমন ৫টি ফল সম্পর্কে, যেগুলো ক্যান্সার প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে-
১. ব্লুবেরি: ছোট অথচ শক্তিশালী সুরক্ষা বন্ধন- ব্লুবেরিতে প্রচুর পরিমাণে পলিফেনল এবং অ্যান্থোসায়ানিন রয়েছে, যা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, ব্লুবেরির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোষের জেনেটিক ক্ষতি রোধে সাহায্য করে, বিশেষ করে স্তন ও কোলন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে। এছাড়া এটি প্রদাহ কমিয়ে ইমিউন সিস্টেমকে উন্নত করে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
২. ডালিম: লাল রত্ন যা কোষকে দেয় সুরক্ষা- ডালিমের খোসায় ও গুঁড়োর মধ্যে এলাজিক অ্যাসিড এবং অন্যান্য ফাইটোকেমিক্যাল থাকে, যেগুলো গবেষণায় ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকে থামাতে সক্ষম হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এটি কোষের ডিএনএ-র মেরামত প্রক্রিয়া বাড়ায় এবং প্রদাহ হ্রাস করে। ডালিম নিয়মিত খেলে প্রস্টেট ও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।
৩. বেগুনি আঙ্গুর: কোষের পুনর্জীবনের রসায়ন- বেগুনি আঙ্গুরে থাকা রেসভেরাট্রল একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ফ্রি র্যাডিক্যাল দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতি রোধ করে। এটি কোষের বৃদ্ধির নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং জিনগত মাত্রায় ক্যান্সার কোষের বিকাশ ঠেকায়। এছাড়া রেসভেরাট্রল হৃদরোগ এবং মস্তিষ্কের সুরক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ।
৪. অ্যাসাই বেরি: দক্ষিণ আমেরিকার এই বিরল ফলের মধ্যে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যার পরিমাণ অনেক বেশি সাধারণ বেরির তুলনায়। অ্যাসাই বেরির অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি ফ্রি র্যাডিক্যালের আক্রমণ থেকে কোষকে রক্ষা করে এবং শরীরের সামগ্রিক প্রদাহ কমায়, যা ক্যান্সারসহ বহু দীর্ঘমেয়াদী রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।
৫. আমলকি: ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মেলবন্ধন - আমলকি বাংলাদেশের জনপ্রিয় ফলগুলোর মধ্যে অন্যতম। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে, যা প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। ভিটামিন সি ফ্রি র্যাডিক্যাল দমন করে কোষের বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণে রাখে, ত্বক ও লিভার স্বাস্থ্য উন্নত করে, এবং দীর্ঘমেয়াদী রোগ প্রতিরোধে অবদান রাখে।
স্বাস্থ্য সচেতনতায় অগ্রগণ্য ভূমিকা - সুস্থ থাকার জন্য মাত্রাতিরিক্ত কোন খাদ্যাভ্যাস নয়, বরং সুষম ও বৈচিত্র্যময় খাদ্যের প্রয়োজন। প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় এই ফলগুলো যুক্ত করা মানে শুধু সুস্বাদু খাবার নয়, বরং ক্যান্সারের মতো জটিল রোগ থেকে সুরক্ষা পাওয়ার একটি প্রাকৃতিক উপায়। শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কোষের সঠিক কার্যকারিতা বজায় রাখতে ফলমূলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুরুত্ব অপরিসীম।
প্রতিদিন ছোট ছোট পদক্ষেপের মাধ্যমে আমরা বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে নিজেকে এবং পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে পারি। প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ ফলগুলো এই যাত্রায় একান্ত সহায়ক।