ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার সহজ উপায় জানুন

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার সহজ উপায় জানুন
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

২০১২ সালে আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন (আইডিএফ) ডায়াবেটিসকে বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে ঘোষণা করে। বাংলাদেশের ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে প্রায় ৯৭ শতাংশই টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, যা প্রতিরোধ-নিয়ন্ত্রণযোগ্য।

রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শরীরচর্চা এবং মানসিক চাপ কমানোর কৌশল একসঙ্গে গ্রহণ করলে ডায়াবেটিস কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ওষুধের পাশাপাশি জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং আত্ম-যত্নই ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনায় মুখ্য ভূমিকা পালন করে।


স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞদের মতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ হলো প্রতিদিনকার কিছু অভ্যাস। সহজ কিছু উপায় মেনে চললে ডায়াবেটিস সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং এক সময় রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

 বিশেষজ্ঞদের মতানুযায়ী ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উপায়সমূহঃ
১. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসঃ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সুষম খাবার অপরিহার্য। প্রক্রিয়াজাত খাবার পরিহার করে অপ্রক্রিয়াজাত খাবারের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। পরিশোধিত শর্করা এবং কার্বোহাইড্রেট ধরনের খাদ্য গ্রহণে সতর্ক থাকতে হবে। এর পরিবর্তে বিভিন্ন ধরনের ফল, সবজি, গোটা শস্য, চর্বিহীন মাংস এবং স্বাস্থ্যকর চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ করা জরুরি। খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণও রক্তের শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে।


২. নিয়মিত শরীরচর্চাঃ ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য নিয়মিত শরীরচর্চা অত্যন্ত উপকারী। এটি ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা বাড়ায়, রক্তের শর্করার মাত্রা কমায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে। সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি অ্যারোবিক ব্যায়াম, যেমন – brisk হাঁটা, সাঁতার কাটা বা সাইকেল চালানো উপকারী। এছাড়াও শক্তি বর্ধক ও পেশি গঠনমূলক ব্যায়াম সার্বিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়ক। একটানা দীর্ঘক্ষণ বসে না থেকে কাজের ফাঁকে উঠে দাঁড়ানো বা পায়চারি করতে হবে।


৩. ওজন নিয়ন্ত্রণঃ অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা ডায়াবেটিসের অন্যতম প্রধান কারণ। সামান্যতম ওজন হ্রাসও রক্তের শর্করা ও ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হয়। সুষম খাবার এবং নিয়মিত শরীরচর্চা স্বাস্থ্যকর ওজন নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।


৪. কার্বোহাইড্রেট গ্রহণে সতর্কতাঃ কার্বোহাইড্রেট সরাসরি রক্তের শর্করার মাত্রার ওপর প্রভাব ফেলে। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) সমৃদ্ধ খাবার যেমন – গোটা শস্য (লাল আটার রুটি, ঢেঁকিছাঁটা চাল), ডাল, সবজি এবং শ্বেতসার কম এমন সবজি বেছে নিতে হবে। এই জটিল কার্বোহাইড্রেটগুলো সারা দিন দেহে সমানভাবে ছড়িয়ে পড়তে সহায়তা করে।


৫. মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণঃ মানসিক চাপ রক্তের শর্করার মাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে কারণ এটি হরমোনের প্রতিক্রিয়া বাড়িয়ে গ্লুকোজের উৎপাদন বৃদ্ধি করে। তাই চাপ নিয়ন্ত্রণের কৌশল মেনে চলা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, শরীরচুর্চা এবং পছন্দের শারীরিক কার্যকলাপ এক্ষেত্রে সহায়ক। এছাড়াও, পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং কর্মজীবনের ভারসাম্য রক্ষা করা মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


৬. পর্যাপ্ত পানি পানঃ দেহের সঠিক আর্দ্রতা বজায় রাখা সার্বিক সুস্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। পর্যাপ্ত পানি পান দেহের পানিশূন্যতা কমায়, কিডনিকে সক্রিয় রাখে এবং রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। দৈনিক কমপক্ষে আট কাপ পানি পান করা দেহের প্রয়োজন মেটাতে এবং সক্রিয় রাখতে পারে।


৭. খাবারের সময়সূচি ও পরিমাণঃ প্রতিবেলার খাবার সময়মতো খেতে হবে এবং কী পরিমাণ খাওয়া হচ্ছে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অতিরিক্ত পরিমাণে না খেয়ে অল্প অল্প পরিমাণে খাবার গ্রহণ করা উচিত।


৮. আঁশযুক্ত খাবার ও শাকসবজিঃ আঁশযুক্ত গোটা শস্য এবং বেশি করে শাকসবজি ও ফলমূল (পরিমাণ মতো) খাওয়ার প্রবণতা বাড়াতে হবে। ময়দার রুটি বা মিলে ছাঁটা চালের পরিবর্তে লাল আটার রুটি বা ঢেঁকিছাঁটা চালের ভাত খাওয়া ভালো।


৯. প্রক্রিয়াজাত খাবার পরিহারঃ ফাস্ট ফুড, কোমল পানীয়, অতিরিক্ত লবণ ও চর্বিজাতীয় খাবার, এবং বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানে পরিবেশিত অস্বাস্থ্যকর খাদ্য পরিহার করতে হবে।


১০. ধূমপান বর্জনঃ ধূমপান ডায়াবেটিসের ঝুঁকি এবং জটিলতা উভয়ই বাড়িয়ে দেয়, তাই এটি সম্পূর্ণরূপে বর্জন করা উচিত।



১১. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও বিশেষজ্ঞের পরামর্শঃ রক্তের গ্লুকোজ, লিপিড, রক্তচাপ ও ওজন অবশ্যই লক্ষ্যমাত্রায় রাখতে হবে। নিয়মিত ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা এবং ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞের (এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট) কাছে চিকিৎসা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। ওষুধ, ব্যায়াম, খাদ্য গ্রহণ তথা সার্বিক জীবনযাপন–সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট এবং বিজ্ঞানসম্মত উপদেশ মেনে চলা আবশ্যক।


তবে, জীবনযাত্রায় যেকোনো বড় ধরনের পরিবর্তন আনার আগে অবশ্যই একজন পেশাদার স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।


সম্পর্কিত নিউজ