নতুন যুগ, নতুন নিয়ম: প্রযুক্তির দাপটে বদলে যাচ্ছে চাকরির মানচিত্র

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তির বিস্ময়কর উন্নতি আজ চাকরির বাজারে এক বিপ্লবের সূচনা করেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), অটোমেশন, রোবোটিক্স, এবং ডেটা অ্যানালিটিক্সের সমন্বয়ে শ্রমবাজারের গতি-বিধান বদলে যাচ্ছে প্রতিদিন। কিন্তু এই পরিবর্তন শুধু কাজের ধরনকেই নয়, অনেক ক্ষেত্রে মানুষের কাজ হারানোর আশঙ্কাও বাড়িয়ে দিয়েছে।
প্রশ্ন হল, এই বিশাল পরিবর্তনের ঢেউয়ের প্রথম ধাক্কা কে কোথায় পাবে?
কোন পেশাগুলো প্রযুক্তির ঝুঁকিতে সবচেয়ে বেশী?
সাম্প্রতিক গবেষণা ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার রিপোর্ট অনুসারে, যেসব পেশার কাজগুলো অত্যন্ত পুনরাবৃত্তিমূলক, নিয়ম-কানুন বেঁধে পরিচালিত, এবং সৃজনশীলতার চাহিদা কম, সেগুলো প্রযুক্তির ছোঁয়ায় দ্রুত বিপর্যস্ত হতে পারে।
এই ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি নিচে উল্লেখিত পেশাগুলোতে দেখা যাচ্ছে:
◑ ডেটা এন্ট্রি অপারেটর: যেখানে হাজার হাজার তথ্য ম্যানুয়ালি ইনপুট করা হয়, সেখানে সফটওয়্যার ও অটোমেটেড সিস্টেম মুহূর্তেই এই কাজ সম্পন্ন করে ফেলে। ফলে মানবশক্তির চাহিদা কমে যাচ্ছে।
◑ কল সেন্টার কর্মী: উন্নত চ্যাটবট এবং ভয়েস রেসপন্স সিস্টেম কল সেন্টারের কাজ অনেকাংশেই করে ফেলছে, যার ফলে সাধারণ গ্রাহক সেবা কর্মীদের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে।
◑ ক্যাশিয়ার এবং বিক্রয় সহায়ক: সুপারমার্কেট ও খুচরা ব্যবসায় সেলফ-চেকআউট মেশিন ও ডিজিটাল পেমেন্টের ব্যবহার বাড়ায় ক্যাশিয়ারদের কাজের পরিমাণ কমছে।
◑ ম্যানুফ্যাকচারিং লেবার ও কারখানা শ্রমিক: আধুনিক রোবট এবং স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতির ব্যবহার শ্রমিকের পরিবর্তে অনেক দ্রুত এবং দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে, ফলে অনেক শ্রমিকের চাকরির নিরাপত্তা অনিশ্চিত।
প্রযুক্তি কি শুধুই চাকরি কেড়ে নিচ্ছে?
তবে প্রযুক্তির অগ্রগতি শুধু চাকরি কেড়ে নেয় তা নয়, অনেক নতুন পেশা এবং কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করছে। যেমন:
◑ ডেটা সায়েন্টিস্ট এবং অ্যানালিস্ট: যাঁরা বিশাল তথ্য থেকে গূঢ় তথ্য বের করে ব্যবসা ও নীতিনির্ধারণে সহায়তা করেন।
◑ মেশিন লার্নিং ইঞ্জিনিয়ার: যারা AI মডেল তৈরি এবং প্রশিক্ষণ দেন।
◑ সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ: ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অপরিহার্য পেশাজীবী।
◑ ডিজিটাল মার্কেটিং স্পেশালিস্ট এবং UI/UX ডিজাইনার: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ব্র্যান্ড ও ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা উন্নয়নে কাজ করেন।
কিন্তু এই পেশাগুলোতে প্রবেশের জন্য অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ, উচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির সাথে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা দরকার, যা সবার জন্য সহজলভ্য নয়।
ঝুঁকি থেকে বাঁচার উপায় কী?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর যুগে টিকে থাকার মূল চাবিকাঠি হলো—নিরন্তর শেখা ও দক্ষতা উন্নয়ন।
সরকার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত:
◑ কর্মীদের জন্য পুনঃপ্রশিক্ষণ (reskilling) ও দক্ষতা উন্নয়ন (upskilling) প্রোগ্রাম চালু করা।
◑ শিক্ষাব্যবস্থায় প্রযুক্তি ও ডিজিটাল স্কিলের অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি।
◑ টেকনোলজি ও ইন্ডাস্ট্রি সংশ্লিষ্ট কোর্সে ছাত্রছাত্রীদের আগ্রহ বাড়ানো।
তাছাড়া, ব্যক্তি পর্যায়েও নিয়মিত নতুন প্রযুক্তি শেখার আগ্রহ এবং বাস্তবায়ন জরুরি।
চাকরির বাজারে প্রযুক্তির অগ্রগতি অব্যাহত থাকবে, এবং এর প্রভাব আরও গভীর হবে। এই পরিবর্তনকে বাধা দেয়া সম্ভব নয়, বরং আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে, যাতে আমরা প্রযুক্তির সহায়তায় নিজেকে আরো দক্ষ করে তুলতে পারি। যারা প্রস্তুত, তারাই এই নতুন যুগের সেরা কর্মী হিসেবে বাঁচবে। অন্যদিকে যারা নতুন দক্ষতা অর্জনের সুযোগ নেবে না, তারা চাকরিহীনতার ঝুঁকিতে পড়বে। তাই প্রযুক্তির পরিবর্তিত বিশ্বে নিজেদের রূপান্তরের জন্য প্রস্তুত হওয়া আজকের প্রয়োজনীয়তা।