শিশুর প্রথম ফল - কখন, কীভাবে এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি সূচনা?

শিশুর প্রথম ফল - কখন, কীভাবে এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি সূচনা?
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

শিশুর খাদ্যাভ্যাস গঠনের প্রথম ধাপ হলো মাতৃদুগ্ধ, যা শিশুর জন্মের পর প্রথম ছয় মাস পর্যন্ত অপরিহার্য পুষ্টি সরবরাহ করে। কিন্তু ছয় মাস পার হওয়ার পর শিশুর পুষ্টির চাহিদা বেড়ে যায়, তখনই শুরু হয় পরিপূরক খাবারের ধাপে ধাপে পরিচয়। এর মধ্যে সবচেয়ে সহজলভ্য এবং পুষ্টিকর উপাদান হলো ফল। তবে প্রশ্ন থাকে, শিশুকে কখন থেকে ফল খাওয়ানো শুরু করা উচিত? কী ধরনের ফল শিশুর জন্য উপযোগী? এবং কীভাবে তা খাওয়ানো হবে সবচেয়ে নিরাপদ ও ফলপ্রসূ?

শিশুর প্রথম ফল খাওয়ার আদর্শ সময় বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুর বয়স যখন ছয় মাস অতিক্রম করে, তখন থেকেই ফল ও অন্যান্য মসৃণ খাবারের পুষ্টি শুরু করা যেতে পারে। এই সময় শিশুর হজম ব্যবস্থা অনেকটাই পরিপক্ক হয়, ফলে নতুন খাবার হজম করতে সাহায্য করে। তবে কোনো নতুন খাবার দেয়ার আগে অবশ্যই শিশুর শারীরিক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য রাখা জরুরি। ধীরে ধীরে ছোট ছোট পরিমাণে ফল দেওয়া শুরু করতে হবে।
 

কোন ফল দেওয়া উচিত এবং কেন?

শিশুর প্রথম ফল হিসেবে কলা অত্যন্ত উপযোগী। কারণ এটি মসৃণ, প্যাকায় পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং হজমে সহায়ক। এর পর পাকা নাশপাতি, ভাপ দেওয়া আপেল, পাকা পেয়ারাও দেওয়া যেতে পারে। এগুলো প্রাকৃতিক শর্করা ও ফাইবার সমৃদ্ধ, যা শিশুর পাচনতন্ত্রকে সুস্থ রাখে। ফলের ভিটামিন-সি শিশুর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে।

নবম থেকে বারো মাস বয়সে নতুন নতুন ফল যেমন তরমুজ, আম, পাকা আঙুর (বীজ ছাড়া), পাকা আমরুদ দেওয়া যেতে পারে। অবশ্যই নতুন ফল দেয়ার সময় প্রথম তিন দিন শিশুর শরীরে কোনো অ্যালার্জি বা অসুবিধা হচ্ছে কিনা তা খেয়াল রাখতে হবে।
 

ফল খাওয়ানোর নিরাপত্তা ও পদ্ধতি 

ফল ভালোভাবে ধুয়ে, খোসা ও বীজ ফেলে দেওয়া আবশ্যক। কাঁচা ও হার্ড ফল প্রথমে সেদ্ধ বা ভাপ দিয়ে মসৃণ পিউরি বানিয়ে খাওয়ানো উচিত। এতে শিশু সহজে হজম করতে পারে এবং গলায় আটকে যাওয়ার ঝুঁকি কমে।

প্যাকেটজাত বা বাজারজাত ফল পিউরি থেকে শিশুকে দূরে রাখা ভালো, কারণ তাতে রসায়নিক সংরক্ষণকারী থাকতে পারে যা শিশুর জন্য ক্ষতিকর। তাই ঘরে তৈরি, তাজা ও নিরাপদ ফলই বেছে নিতে হবে।
 

ফলের পুষ্টিগুণ ও শিশু বিকাশে ভূমিকা

ফলে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন (বিশেষ করে ভিটামিন সি ও এ), খনিজ পদার্থ, এবং ফাইবার, যা শিশুর শরীরের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে। এছাড়া ফাইবার হজমতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। নিয়মিত ফল খাওয়ার অভ্যাস শিশুদের স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গঠনে সহায়তা করে, যা ভবিষ্যতে তাদের সুস্থ জীবনের ভিত্তি।
 

সতর্কতা ও পরামর্শ 

শিশুর খাদ্য তালিকায় নতুন কোনো ফল অন্তর্ভুক্ত করার আগে সর্বদা ধীরে ধীরে ছোট পরিমাণে দেয়া উচিত এবং ২-৩ দিন পর্যবেক্ষণ করতে হবে। কোনো অ্যালার্জিক রিয়্যাকশন দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। এছাড়া গলা আটকে যাওয়ার ঝুঁকি কমাতে ছোট ছোট টুকরো বা পিউরি ছাড়া অন্য কোন ধরনের ফল খাওয়ানো উচিত নয়।

শিশুর প্রথম ফল খাওয়ার সময় এবং পদ্ধতি যথাযথভাবে মেনে চলা পুষ্টির এক গুরুত্বপূর্ণ সূচনা। এটি শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বিশেষ ভূমিকা রাখে। সঠিক সময়ে ও সঠিক পদ্ধতিতে ফল খাওয়ানো মানে শিশুকে সুস্থ, শক্তিশালী ও জীবনের প্রথম ধাপে সঠিক পুষ্টি দেওয়া। তাই, প্রতিটি অভিভাবককে উচিত সচেতন থাকা ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে শিশুর খাদ্যাভ্যাস গঠন করা।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ