এসাইনমেন্টে প্রযুক্তির ছোঁয়া, কিন্তু সত্যের খোঁজে শিক্ষক কতটা প্রস্তুত?

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
বর্তমান শিক্ষাক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) ব্যবহার ব্যাপক বৃদ্ধি পাচ্ছে। ChatGPT, Bard, ও অন্যান্য AI টুলের সাহায্যে শিক্ষার্থীরা এখন এসাইনমেন্ট লেখা অনেক সহজ মনে করেন। কিন্তু এই প্রযুক্তির সুবিধার সঙ্গে এসেছে এক বড় প্রশ্ন-এসাইনমেন্টগুলো আসলেই শিক্ষার্থীর নিজস্ব লেখা নাকি AI এর তৈরি?
কেন বেড়েছে AI লেখা এসাইনমেন্টের ব্যবহার?
বহু শিক্ষার্থী কঠিন সময়ে দ্রুত ভালো মানের লেখা পেতে AI এর সহায়তা নিচ্ছেন। সময়ের সীমাবদ্ধতা, চাপ, এবং সফলতার আশায় এই প্রবণতা বেড়েছে। তবে এতে শিক্ষার মৌলিক উদ্দেশ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেও বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন।
শিক্ষকেরা কীভাবে চিনবেন AI টুলের লেখা?
AI লেখা সাধারণত মানব লেখার থেকে কিছু দৃষ্টিতে আলাদা হয়:
⇨ ভাষার স্বচ্ছতা ও নির্ভুলতা: AI লেখা খুবই সাবলীল ও পরিপাটি হয়, যেখানে মানুষের লেখা মাঝে মাঝে ভুলভ্রান্তি বা স্বতঃস্ফূর্ততা থাকে।
⇨ ভাবনার গভীরতা ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা: AI সাধারণত নিরপেক্ষ ও তথ্যভিত্তিক, কিন্তু মানুষের লেখায় ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও আবেগ প্রকাশ পায়।
⇨ প্যাটার্ন ও পুনরাবৃত্তি: AI প্রায়ই একই রকম বাক্য গঠন বা শব্দচয়ন ব্যবহার করে, যা সন্দেহের সূচনা করতে পারে।
ডিজিটাল টুলের সাহায্য:
শিক্ষকরা এখন AI লেখার সনাক্তকরণে বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার করছেন। এগুলো লেখার কাঠামো, শব্দের ব্যবহার, তথ্যসূত্র এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে বলে দেয় লেখাটি AI তৈরি নাকি মানবিক।
তবে শুধুমাত্র সফটওয়্যারের ওপর নির্ভর করাই যথেষ্ট নয়, শিক্ষকরা শিক্ষার্থীর আগের কাজের সঙ্গে তুলনা করে সামঞ্জস্যও যাচাই করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পদক্ষেপ:
অনেক প্রতিষ্ঠান এখন AI ব্যবহারের নীতিমালা প্রণয়ন করছে। কোথাও AI-র সহায়তা আংশিকভাবে মেনে নেয়া হলেও সম্পূর্ণ AI দ্বারা লেখা এসাইনমেন্ট জমা দেওয়া হলে তা জালিয়াতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর দায় ও দায়িত্ব:
শিক্ষকদের ভূমিকা এখন শুধু পরীক্ষা নেওয়া নয়, শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে চিন্তা করতে শেখানো। অনেক শিক্ষক "প্রসেস ভিত্তিক মূল্যায়ন" বা কাজের ধাপ পর্যবেক্ষণ করেই মূল্যায়ন করছেন, যাতে শিক্ষার্থীর নিজস্ব প্রয়াস বোঝা যায়।
শিক্ষার্থীরাও সচেতন হতে হবে, যাতে তারা AI কে সাহায্য হিসেবে ব্যবহার করেন, প্রতিলিপি হিসেবে নয়।
AI টুল ব্যবহার শিক্ষাকে সহজ করে দিয়েছে, তবে শিক্ষার মর্মবাণী হলো চিন্তা ও নিজস্ব যুক্তির বিকাশ। তাই প্রযুক্তির সঙ্গে সতর্কতা অবলম্বন করে শিক্ষার নৈতিকতা রক্ষা করাই এখন সময়ের দাবি। শিক্ষকরা যথাযথ প্রযুক্তি ও মানবিক মূল্যায়নের মাধ্যমে নিশ্চিত করছেন, শিক্ষার্থীরা প্রকৃত অর্থেই শিক্ষিত হচ্ছে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।