বদলে যাওয়া বিশ্ব, বদলাতে হচ্ছে পোশাক শিল্পকেও: বাংলাদেশের প্রস্তুতি কতদূর?

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
বাংলাদেশের পোশাক শিল্প দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি। দেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ এসেছে এই খাত থেকে, যা লাখ লাখ শ্রমিকের জীবিকা নির্বাহের মূল উৎস। কিন্তু বৈশ্বিক বাজারে পোশাক শিল্প আজ এক কঠোর প্রতিযোগিতার মুখোমুখি। ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, এবং আরও অনেক দেশ নিজেদের উৎপাদন খরচ কমিয়ে ও প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান চ্যালেঞ্জ করছে।
বিশ্বের বৃহৎ পোশাক বাজারের মোট মূল্য প্রায় ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলার হলেও, বাংলাদেশের ভাগ সেই তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ, যা একদিকে যেমন সাফল্যের পরিচায়ক, অন্যদিকে বিশ্ববাজারের চাপকে চিত্রিত করে।
বাংলাদেশের সাফল্যের পিছনে রয়েছে সস্তা শ্রম, অভিজ্ঞতা এবং বৃহৎ উৎপাদন ক্ষমতা। তবে বর্তমানে বাজারের চাহিদা বদলেছে। ক্রেতারা এখন 'ফাস্ট ফ্যাশন' থেকে 'টেকসই ও পরিবেশবান্ধব ফ্যাশন'-এর দিকে ঝুঁকছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো পরিবেশবান্ধব উৎপাদন প্রক্রিয়া যেমন ইকো-ফ্রেন্ডলি টেক্সটাইল ও গ্রিন কারখানা স্থাপনে কাজ করছে, যা বৈশ্বিক মান বজায় রাখতে সাহায্য করছে।
তবে এখনও আছে বড় চ্যালেঞ্জ। দ্রুত পরিবর্তিত ফ্যাশন ট্রেন্ড মেটাতে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, ডিজিটাল কাটিং, স্বয়ংক্রিয় সেলাই, ও উৎপাদন পরিকল্পনার সফটওয়্যার ব্যবহার কম। এই প্রযুক্তিগত দুর্বলতা দ্রুত নতুন ডিজাইন তৈরি ও ডেলিভারি দিতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
বাংলাদেশে বর্তমানে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ব্র্যান্ড তৈরি ও আন্তর্জাতিক বাজারে নিজস্ব পরিচিতি গড়ে তুলার ওপর জোর দিচ্ছে। এ ছাড়া শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণ বাড়ানো হচ্ছে, যা মানসম্মত পণ্যের উৎপাদন নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।
বিশ্বব্যাপী পোশাক শিল্পে দেশীয় উৎপাদকদের টিকে থাকতে হলে কেবল সস্তা শ্রম নয়, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা, পরিবেশ বান্ধবতা, দ্রুত সরবরাহ, এবং ব্র্যান্ড পরিচিতি নিশ্চিত করাই আজ প্রথম শর্ত। এই পথেই চলছে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প।
ভবিষ্যৎ একদিকে যেমন প্রযুক্তি, দক্ষতা ও নকশায় বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর নির্ভরশীল, অন্যদিকে বৈশ্বিক বাজারের পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানোই টিকে থাকার মূল চাবিকাঠি। বাংলাদেশ যদি এই সমন্বয় করতে পারে, তবে আগামী বছরগুলোতে পোশাক শিল্পে তার অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্প এখন শুধু সস্তা শ্রমের ভরসায় নয়, বরং প্রযুক্তি ও পরিবেশ সচেতনতা দিয়ে বিশ্ববাজারে নিজের জায়গা পাকাতে সচেষ্ট। এই অগ্রযাত্রা যেন থেমে না যায়, তাই সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।