সুন্দর ফল মানেই নিরাপদ নয়: রঙের আড়ালে ভয়ংকর সত্য

সুন্দর ফল মানেই নিরাপদ নয়: রঙের আড়ালে ভয়ংকর সত্য
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

বাজারে রঙিন, ঝকঝকে এবং আকর্ষণীয় দেখতে ফলগুলো আমাদের চোখের মোহনায় ভরিয়ে দেয়। কিন্তু এই সৌন্দর্যের আড়ালে লুকিয়ে আছে বিপজ্জনক সত্য — অধিকাংশ ফল আজ কৃত্রিম রাসায়নিকের সাহায্যে পাকানো হচ্ছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে।

সাধারণত বাজারে পাওয়া আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, পাপায়া, কলা সহ বিভিন্ন ফল কৃত্রিম উপায়ে পাকানো হয় কার্বাইড, ইথিলিন গ্যাস বা বিভিন্ন হরমোন জাতীয় রাসায়নিক ব্যবহার করে। এসব রাসায়নিক দ্রুত ফল পাকাতে সাহায্য করলেও, ফলের পুষ্টিগুণ কমিয়ে দেয় এবং শরীরের জন্য ক্ষতিকর পদার্থ সৃষ্টি করে।


কিভাবে হয় কৃত্রিম পাকানো? কার্বাইড প্যাকিংয়ের ক্ষেত্রে ফলের পেছনে কার্বাইডের ছোট ছোট টুকরা রাখা হয়। এর সংস্পর্শে আসার পর ফল দ্রুত পাকতে শুরু করে, কিন্তু এতে প্রচুর পরিমাণে ক্ষতিকর গ্যাস নির্গত হয়। ইথিলিন গ্যাস ব্যবহার করে ফলের প্যাকেজিং করা হয় যাতে এটি দ্রুত পাকে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব রাসায়নিক প্রয়োগের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ফলের মধ্যে রয়ে যায় বিপজ্জনক রাসায়নিকের পরিমাণ।

 

স্বাস্থ্যঝুঁকির ব্যাপকতা- কৃত্রিম পাকানো ফল খাওয়ার ফলে শরীরের নানা সমস্যা হতে পারে। শরীরের হজম শক্তি দুর্বল হয়ে যেতে পারে, গ্যাস্ট্রিক সমস্যা, এলার্জি, মাথাব্যথা এবং লিভার ও কিডনির ফাংশন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। দীর্ঘমেয়াদে এসব রাসায়নিক শরীরে জমে ক্যানসারসহ অন্যান্য জটিল রোগের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে শিশু, গর্ভবতী নারী ও বয়স্কদের জন্য এই ফলগুলো অতিরিক্ত বিপজ্জনক।


বাজার ও নিয়ন্ত্রণের চিত্র- বাজারে ফল বিক্রেতারা ফল দ্রুত পাকানোর জন্য এসব রাসায়নিক ব্যবহার করে থাকেন। এই প্রক্রিয়ায় ফলের বাহ্যিক সৌন্দর্য বেড়ে যায় কিন্তু ভেতরে থাকা রাসায়নিক শরীরে প্রবেশ করে। সরকারি পর্যায়ে এই কৃত্রিম পাকানোর ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ থাকা সত্ত্বেও, বাস্তবে তা কার্যকরী হয়নি। নিয়মিত অনুসন্ধান ও অভিযান চালিয়ে কিছু ব্যবসায়ীকে শনাক্ত করা হলেও ব্যাপক নিয়ন্ত্রণের অভাব রয়েছে।


প্রাকৃতিক ও নিরাপদ বিকল্প- বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফলের প্রাকৃতিক পাকানো প্রক্রিয়া অপেক্ষাকৃত নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর। ফলকে ঠাণ্ডা ও সুষম তাপমাত্রায় রেখে, সঠিক সময় দেয়ার মাধ্যমে ফলের স্বাদ ও পুষ্টি বজায় থাকে। আন্তর্জাতিক বাজারে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ফল পাকানো হয়, যেখানে রাসায়নিকের বদলে প্রাকৃতিক পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।


ভোক্তাদের করণীয়- 

১. ফল কেনার আগে রঙ, গন্ধ ও টেক্সচার ভালোভাবে যাচাই করা। 

২. খুব চকচকে বা অতিরিক্ত পাকানো ফল এড়ানো। ৩. ফল ভালোভাবে ধুয়ে খাওয়া। 

৪. স্থানীয় ও মৌসুমি ফলের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়া। ৫. বাজারে ফল বিক্রেতাদের থেকে সরাসরি ফল কেনার সময় সতর্ক থাকা।

 

 ফল আমাদের শরীরের পুষ্টির উৎস হলেও, কৃত্রিম রাসায়নিকের মাধ্যমে পাকানো ফল এখন একটি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পরিণত হয়েছে। চোখে পড়া সৌন্দর্যের পেছনে লুকিয়ে আছে বিষক্রিয়া, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে মারাত্মক ক্ষতি সাধন করতে পারে। তাই সতর্কতা অবলম্বন করে প্রাকৃতিক ও নিরাপদ ফল খাওয়ার ওপর গুরুত্ব দেয়া জরুরি।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ