গেম নয় শুধু খেলা, শিশুদের জন্য আনন্দময় শিক্ষার অন্যতম হাতিয়ারও

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
আজকের যুগে পড়াশোনা শুধু বই আর লিখনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। প্রযুক্তির সাথে শিক্ষাব্যবস্থার সংমিশ্রণে এসেছে এক নতুন বিপ্লব—গেমিফিকেশন। এটি এমন একটি শিক্ষাপদ্ধতি, যেখানে গেমের উপাদানগুলো যুক্ত করে পড়াশোনাকে করে তোলা হয় মজার, চ্যালেঞ্জিং এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক। গেমিফিকেশন বা গেম ভিত্তিক শেখার মূল ধারণাটি হলো, শিশুদের শেখার প্রক্রিয়ায় প্রতিযোগিতার অনুভূতি, পুরস্কার ও স্বীকৃতির মাধ্যমে তাদের আগ্রহ বৃদ্ধি করা। সহজভাবে বলতে গেলে, যখন শিক্ষার্থীরা কোনো বিষয় শিখতে গেম খেলতে থাকে, তখন তাদের শেখার আগ্রহ বেড়ে যায় এবং তারা শেখার প্রতি অনেক বেশি মনোযোগী হয়।
বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রমাণ করেছে, গেমিফিকেশন শিশুর মস্তিষ্কে ডোপামিন নামক রসায়ন নিঃসৃত করে, যা আনন্দ ও পুরস্কারের অনুভূতি দেয়। এই রসায়ন শিক্ষার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলে, ফলে শিশুরা স্বেচ্ছায় ও উৎসাহের সঙ্গে শেখার কাজ করে।
বিশেষ করে গণিত, বিজ্ঞান, ভাষা শিক্ষা এবং ইতিহাসের মতো বিষয়গুলো গেমিফিকেশনের মাধ্যমে অনেক সহজে ও কার্যকরভাবে শেখানো সম্ভব।
উদাহরণস্বরূপ, একটি গণিত গেমে শিশুদের বিভিন্ন ধাপে বিভক্ত সমস্যা সমাধান করতে হয়, যেখানে সফলতা লাভের সঙ্গে সঙ্গে তারা 'পয়েন্ট' ও 'বাজ' অর্জন করে। এই পদ্ধতি তাদের সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বাড়ায় এবং আত্মবিশ্বাস জোগায়।
বাংলাদেশেও এখন শিক্ষায় গেমিফিকেশন পদ্ধতি গ্রহণ শুরু হয়েছে। অনলাইন শিক্ষা প্ল্যাটফর্মগুলো শিশুদের জন্য বিভিন্ন শিক্ষামূলক গেম চালু করেছে, যেখানে তারা খেলাধুলার মাধ্যমে সহজেই নতুন ধারণা ও তথ্য শিখছে। স্কুলের পাঠ্যক্রমেও ধীরে ধীরে এই পদ্ধতি সংযোজনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
গেমিফিকেশন শুধু শিশুর শেখার আগ্রহই বাড়ায় না, পাশাপাশি এটি তাদের মধ্যে দলগত কাজ, নেতৃত্ব দক্ষতা, এবং সমাধানমুখী চিন্তাভাবনা গড়ে তোলে। শিক্ষাবিদদের মতে, গেমের মাধ্যমে শেখানো হলে শিশুরা ত্রুটির থেকে ভয় পায় না, বরং ত্রুটি থেকে শিখে নিজেকে উন্নত করার সুযোগ পায়।
তবে সফল গেমিফিকেশনের জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা ও সমন্বয়। গেমের উপাদানগুলো যেন পাঠ্যবস্তুর সঙ্গে খাপ খায় এবং শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য পূরণ করে তা নিশ্চিত করতে হবে। বিনোদন-মুখর হলেও শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যকে কখনও অবহেলা করা যায় না।
অবশেষে বলা যায়, গেমিফিকেশন শিশুরা যে শুধু 'শেখে' তা নয়, তারা 'আনন্দে শেখে'। তাদের শেখার প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে, মস্তিষ্কের সক্রিয়তা উন্নত করে এবং শিক্ষাকে করে তোলে জীবনের অংশ। আগামী দিনের শিক্ষাব্যবস্থা এমন গেমিফিকেশনমূলক পদ্ধতির উপর ভিত্তি করেই দাঁড়াবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
শিক্ষার ভবিষ্যত যেখানে খেলা-আনন্দ আর প্রযুক্তির সঙ্গে মিশে যাবে, সেখানে গেমিফিকেশনই হবে শিশুদের শেখার সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।