কীভাবে নিয়মিত পাঠ হয় একজন সফল লেখকের হাতিয়ার

কীভাবে নিয়মিত পাঠ হয় একজন সফল লেখকের হাতিয়ার
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

লেখক হওয়া কেবল কলম ধরার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া যেখানে পাঠের অভ্যাস গভীর ভূমিকা রাখে। বই পড়ার অভ্যাস কেবল তথ্যের ভাণ্ডার বৃদ্ধি করে না, বরং মস্তিষ্কের জটিল কাজকে প্রভাবিত করে, যা লেখা প্রক্রিয়াকে এক নতুন মাত্রা দেয়। তবে বই পড়া এবং লেখক হওয়ার মধ্যে যে সরাসরি সম্পর্ক, তা অনেকের কাছে অজানা।

বই পড়ার সঙ্গে লেখার সম্পর্ক, মস্তিষ্কের গঠনগত পরিবর্তন

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত বই পড়ার ফলে মস্তিষ্কের ভাষা, চিন্তা ও সৃজনশীলতার অংশ সক্রিয় হয়। বিশেষ করে যখন পাঠক বইয়ের বিষয়বস্তুকে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করেন, তখন মস্তিষ্কে নতুন স্নায়ুতন্ত্রের সংযোগ তৈরি হয়। এই সংযোগ লেখার সময় তথ্য উপস্থাপন এবং ভাব প্রকাশের ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। ফলে একজন পাঠক ধীরে ধীরে নিজের ভেতরে লেখকের গুণাবলী তৈরি করতে পারেন।


বিভিন্ন ধরনের বই পড়ার গুরুত্ব

শুধুমাত্র গল্প কিংবা কবিতা নয়, বিজ্ঞান, ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, দর্শন—বিভিন্ন বিষয়ে বই পড়া লেখার জন্য বহুমাত্রিক চিন্তার ভিত্তি গড়ে তোলে। এই বহুমাত্রিক জ্ঞান লেখাকে করে গভীর ও তথ্যবহুল। যেমন, ইতিহাসের বই পাঠ করলে লেখায় প্রাসঙ্গিকতা এবং বিশ্লেষণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি আসে, বিজ্ঞান বই পড়লে যুক্তিবোধ এবং বিশ্লেষণী মনোভাব গড়ে ওঠে।


যেভাবে বই পড়া লেখাকে বদলে দেয়: 

১. পাঠের পর প্রতিফলন: বই শেষ করলেই সেটা মস্তিষ্কে রেখে দেওয়ার পরিবর্তে, তার উপস্থাপিত ভাবনা নিয়ে নিজস্ব চিন্তাভাবনা তৈরি করা দরকার। "কেন এই বক্তব্য?" "এটার সঙ্গে আমার অভিজ্ঞতা কীভাবে মিলে?"—এরকম প্রশ্ন করে ভাবতে হবে। 

 

২. লেখার মাধ্যমে অনুশীলন: পড়া যতই হোক, না লিখলে সে জ্ঞান লেখায় রূপান্তর হয় না। তাই পড়ার পর সংক্ষিপ্ত রিভিউ, ব্লগ বা ডায়েরি লেখার অভ্যাস গড়ে তুলুন। 

 

৩. ভাষার গঠন ও স্টাইল বিশ্লেষণ: পাঠক হিসেবে লেখকের বাক্য গঠন, শব্দচয়ন, অলঙ্কারিক প্রয়োগ লক্ষ্য করুন। এতে নিজস্ব লেখায় স্বতন্ত্রতা আসবে।

 

৪. নিয়মিত পাঠের অভ্যাস: দৈনিক বা সাপ্তাহিক সময় নির্দিষ্ট করে বই পড়া চালিয়ে যেতে হবে। নিয়মিত পাঠ মস্তিষ্কের লেখার দক্ষতা বাড়ায়।


পাঠক থেকে লেখক, পরিবর্তনের গল্প

একজন সাধারণ পাঠক যখন বইয়ের ভেতর থেকে শুধু তথ্য গ্রহণ করেন না, বরং তার সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করেন, তখন তিনি নিজেও লেখকের মতো চিন্তা করতে শুরু করেন। তিনি শেখেন কীভাবে ভাব প্রকাশ করতে হয়, কীভাবে ভাষার মাধ্যমে প্রভাব ফেলতে হয়। এই প্রক্রিয়ায় তৈরি হয় নিজস্ব 'লেখকের কণ্ঠস্বর'—যা কোনো বই থেকে সরাসরি কপি নয়, বরং পাঠ ও ভাবনার সংমিশ্রণ।


লেখক হওয়া মানে শুধু সুন্দর লেখা নয়, বরং একটি ধারাবাহিক শিক্ষার ফল। বই পড়া একদিকে যেমন তথ্যের প্রবাহ বয়ে আনে, অন্যদিকে চিন্তাশক্তি ও ভাষার ব্যবহারেও দক্ষতা বাড়ায়। মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্রে পাঠের প্রভাব লেখার গুণগত মান উন্নত করে। তাই বই পড়াকে কখনো শুধুমাত্র বিনোদন মনে করবেন না—এটি আপনার লেখার যাত্রার প্রথম সিঁড়ি। নিয়মিত পড়া, চিন্তা ও লেখা—এই তিনটি উপাদানের সমন্বয়ই তৈরি করে দক্ষ, প্রভাবশালী লেখক।

 

বইয়ের পাতায় যিনি ডুবে থাকেন, তার কলম কখনো শূন্য থাকে না।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ