'নি'আমত'ই হতে পারে সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা!!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
আমাদের জীবনে বিপদ যেমন কঠিন পরীক্ষা, তেমনি সুখ-সমৃদ্ধিও হতে পারে একটি বড় ইমতেহান। দুনিয়ার সহজ-সুবিধা, আর্থিক সচ্ছলতা, সামাজিক মর্যাদা—এসবই যখন আমাদের কাছে আসে, তখন কি আমরা আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি? নাকি আমরা স্বচ্ছন্দ্যতায় ভুলে যাই, আল্লাহর স্মরণ থেকে দূরে সরে যাই?
বিপদের ধৈর্য্য বনাম সুখের কৃতজ্ঞতা, সাহাবীদের বাস্তব শিক্ষণ
খুলাফায়ে রাশেদীনদের মধ্যে একজন, সাহাবি ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) একবার বলেন:
"আমাদের ওপর যখন কষ্ট এসে পড়ে, আমরা ধৈর্য ধরেছিলাম। কিন্তু যখন আল্লাহর দেওয়া সুখ-সমৃদ্ধি আমাদের কাছে এলো, তখন আমরা ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়েছি।"
এ কথা আমাদের কাছে স্পষ্ট বার্তা দেয় যে, বিপদে ধৈর্য্য ধারণ করাটাই সহজ; কিন্তু সুখে সেই ধৈর্য্য ও কৃতজ্ঞতা বজায় রাখা অনেক বেশি কঠিন।
আরেকজন মহান সাহাবি, আলী ইবনে আবু তালিব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এ বিষয়ে বলেন:
"যে ব্যক্তি দুনিয়ায় প্রশস্ত সচ্ছলতা পেয়েছে, কিন্তু বুঝতে পারেনি যে, এটি আল্লাহর পরীক্ষার অংশ, সে তার বুদ্ধিতে নিজেই ধোঁকা খেয়েছে।"
এই বক্তব্যগুলো ইঙ্গিত দেয়—প্রাচুর্য-সমৃদ্ধির মাঝে ফাঁদ থাকে, যা আমাদের আত্মপ্রবঞ্চনার কারণ হতে পারে।
আল কুরআনের নির্দেশনা,সুখ-সমৃদ্ধি ও বিপদ, দুটিই পরীক্ষা
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
"আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, সম্পদের ঘাটতি ও জীবন-সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি দিয়ে। আর ধৈর্যশীলদের শুভসংবাদ দাও।"
(সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৫৫)
এই আয়াতে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, বিপদ আসলে এক পরীক্ষা।
কিন্তু কুরআনের অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেছেন:
"মানুষ যখন নি'আমতে অভিভূত হয়, তখন সে গর্বে মগন হয়ে পড়ে; কিন্তু যখন দুর্দশায় পড়ে, তখন দীর্ঘ প্রার্থনায় লিপ্ত হয়।"
(সূরা ফুসসিলাত, আয়াত ৫১)
এখান থেকে বোঝা যায়, মানুষ বিপদের সময় আল্লাহর কাছে ফিরে আসলেও, সুখে গা ঢাকা দেয়। এই অবস্থাই সবচেয়ে বিপজ্জনক।
আধুনিক মুসলিম সমাজে এর প্রতিফলন-
আজকের দিনে অর্থনৈতিক উন্নতি ও জীবনযাত্রার স্বাচ্ছন্দ্য বেড়েছে। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা ও সামাজিক পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বেশির ভাগ মানুষ তাদের জীবনের সাফল্যের জন্য আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশে পিছিয়ে পড়েছেন। নামাজ, দোয়া, কোরআন তেলাওয়াতে অনীহা বেড়েছে, আত্মতৃপ্তি ও অহংকার বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইসলামের উপদেশ- সুখেও থাকা উচিত ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতা
প্রকাশিত হাদিস অনুযায়ী, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
"সত্যিকারের ধনী ব্যক্তি হলো সে, যার আত্মা তৃপ্ত এবং সে আল্লাহর নৈকট্য লাভে সন্তুষ্ট।" (সহীহ বুখারি)
এটি নির্দেশ করে যে, ধৈর্য্য শুধু কষ্টের জন্য নয়, সুখের মধ্যেও আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও নম্রতা বজায় রাখা জরুরি।
সুখ, সচ্ছলতা, আরাম—এসব যদি আমাদের আল্লাহর স্মরণ থেকে দুরে সরিয়ে দেয়, তাহলে তা হতে পারে সবচেয়ে বড় বিপদ। আল্লাহর দেওয়া নি'আমত গ্রহণের সময়ও সতর্কতা দরকার। কেবল বিপদেই নয়, সুখের মধ্যেও আমাদের উচিত ধৈর্য্য ধারণ এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।
এই সতর্কতা ছাড়া আমরা সহজেই আত্মপ্রবঞ্চনার শিকার হতে পারি। তাই, আমাদের উচিত আল্লাহর প্রদত্ত প্রতিটি মুহূর্তের জন্য কৃতজ্ঞ থাকা এবং জীবনের সকল পরীক্ষায় সতর্ক থাকা।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।