সফলতার পিছনে বিশ্রামের বিজ্ঞানসম্মত গোপনীয়তা

সফলতার পিছনে বিশ্রামের বিজ্ঞানসম্মত গোপনীয়তা
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

মানুষ আজকের ব্যস্ত জীবনযাত্রায় বিশ্রামকে অনেক সময় ছোট করে দেখে। অনেকে ভাবেন, বিশ্রাম মানে শুধুই ঘুমানো বা কাজ থেকে বিরতি নেওয়া। কিন্তু বিজ্ঞান দেখায়, বিশ্রাম হল শরীর ও মনের এক প্রয়োজনীয় পুনর্গঠন প্রক্রিয়া, যা জীবনধারা ও কর্মদক্ষতাকে দীর্ঘমেয়াদে টিকিয়ে রাখে।

বিশ্রাম শুধু ক্লান্তি দূর করার নাম নয় -

শরীর ও মস্তিষ্ক প্রতিদিন প্রচুর কাজ করে। আমাদের মস্তিষ্ক দিনে প্রায় ৮০,০০০ চিন্তা তৈরি করে, আর স্নায়ুতন্ত্র পায় বিশ্রামের মাধ্যমে বিশ্লেষণ ও পুনরুদ্ধারের সময়। ঘুমের সময় মস্তিষ্ক অতিরিক্ত তথ্য ফিল্টার করে, স্মৃতিকে গাঁথে এবং বিষাক্ত পদার্থ দূর করে। ঘুমের অভাবে এই প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হলে স্মৃতিশক্তি কমে যায়, মনোযোগ কমে, আর অবসাদ বাড়ে।


কর্টিসল- চাপের হরমোন ও বিশ্রামের সম্পর্ক

কাজের চাপ বাড়লে শরীরে কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। এই হরমোন দীর্ঘদিন বেশি থাকলে হার্টের সমস্যা, রক্তচাপ বাড়া, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা ও মানসিক অস্থিরতা দেখা দেয়। নিয়মিত বিশ্রাম ও পর্যাপ্ত ঘুম কর্টিসল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা আমাদের শরীরকে শান্ত ও স্বাভাবিক রাখে।

 

বিশ্রামহীনতা কী কী সমস্যার সূত্রপাত?

জটিলতা অনেক: শারীরিক দুর্বলতা, মনোযোগ কমে যাওয়া, মানসিক চাপ, উদ্বেগ, এমনকি ডিপ্রেশন পর্যন্ত। বিশ্রামের অভাবে শরীর ক্লান্তির বিষের মতো কাজ শুরু করে, যা প্রতিদিনের কর্মক্ষমতা ও জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে।

 

মানুষের জৈবঘড়ি ও বিশ্রামের তালমিল

মানবদেহে একটি অন্তর্নিহিত "সার্কাডিয়ান রিদম" বা জৈবঘড়ি আছে, যা আমাদের ঘুম, জাগরণ, হরমোন নিঃসরণ ও বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে। আধুনিক জীবনযাত্রায় রাত জেগে কাজ, অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারের কারণে এই ঘড়ি ভেঙে পড়ছে। এর ফলে সঠিক সময়ে ঘুম আসেনা, শরীরের প্রাকৃতিক ভারসাম্য হারায়, আর নানা রোগ-ব্যাধি দেখা দেয়।


বিশ্রাম ও স্বাস্থ্যকর জীবনধারা: 

বৈজ্ঞানিক গবেষণা বলছে, দৈনিক কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম না হলে শরীর ও মস্তিষ্ক ঠিকমতো কাজ করে না। এছাড়া মাঝেমধ্যেই ছোট ছোট বিরতি, চোখ-মাথার বিশ্রাম, এবং মানসিক শান্তির জন্য সময় দেওয়াও জরুরি।

 

কিভাবে সঠিক বিশ্রাম নিশ্চিত করা যায়?

☞ দৈনিক ঘুমের রুটিন ঠিক রাখা।

☞ প্রযুক্তি ব্যবহার সীমিত করা, বিশেষ করে রাতে।

☞ কাজের মাঝে ছোট বিরতি নেওয়া, বিশেষ করে যাদের অফিস কাজ বেশি।

☞ ধ্যান ও শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মস্তিষ্ক শান্ত রাখা।

☞ শারীরিক ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা।

 

বিশ্রামের অভাব মানবদেহের জন্য ক্রমাগত ক্ষতির বার্তা। তাই এটি শুধু 'বিলাসিতা' নয়, বরং সুস্থ জীবনযাপনের 'জরুরি উপাদান'। বিশ্রামকে গুরুত্ব দিলে কর্মক্ষমতা, সৃজনশীলতা ও মন ভালো থাকবে। বিশ্রামহীন জীবন এক সময় বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেয়।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ