যখন শরীর নিজেকেই আক্রমণ করে

যখন শরীর নিজেকেই আক্রমণ করে
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

মানবদেহের সবচেয়ে জটিল এবং অতি সংবেদনশীল অংশ হলো মস্তিষ্ক এবং স্পাইনাল কর্ড, যা একসঙ্গে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র গঠন করে। এই স্নায়ুতন্ত্র শরীরের নানা অংশকে দ্রুত সংকেত পৌঁছে দেয় এবং আমাদের চলাফেরা, অনুভূতি ও চিন্তার নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু যদি এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিস্টেমেই কোনো রোগ নিজেকে 'ভেতর থেকে' আক্রমণ করতে শুরু করে? এটাই মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস (Multiple Sclerosis, এমএস) নামক এক অটোইমিউন রোগের প্রকৃতি।

মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস কী? 

এমএস হলো একটি দীর্ঘস্থায়ী স্নায়ুর রোগ, যেখানে শরীরের ইমিউন সিস্টেম ভুলক্রমে মস্তিষ্ক ও স্পাইনাল কর্ডের স্নায়ু আবরণী 'মাইলিন' নামক পদার্থকে আক্রমণ করে। মাইলিন হল স্নায়ুর চারপাশে থাকা একটি সুরক্ষা স্তর, যা স্নায়ু সংকেত দ্রুত এবং সঠিকভাবে স্থানান্তরিত হতে সাহায্য করে। মাইলিন নষ্ট হলে স্নায়ুর সংকেত বাধাগ্রস্ত হয়, যার কারণে শরীরের বিভিন্ন অংশে কার্যকারিতা হ্রাস পায়।


রোগের লক্ষণ ও প্রভাব

এমএস-এর লক্ষণগুলো নানা রকম হতে পারে এবং রোগীর ওপর নির্ভর করে তা ভিন্নভাবে প্রকাশ পায়। সাধারণত, শুরুতে হাত-পা ঝাঁজরা হওয়া, দুর্বলতা, ভারসাম্যহীনতা, চক্ষু সমস্যা, বিশেষ করে দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা বা ব্যথা, এমনকি মনে ধোঁয়াশার মতো ভাব অনুভূত হতে পারে। অনেক সময় রোগীর কথা বলা বা হাঁটার গতি দুর্বল হয়ে পড়ে। রোগের এই অপ্রত্যাশিত এবং অস্পষ্ট প্রকৃতির কারণে অনেক সময় রোগ ধরা দেরি হয়।


কারা বেশি ঝুঁকিতে? 

বিশ্বজুড়ে দেখা গেছে, ২০-৪০ বছর বয়সী তরুণ ও মধ্যবয়সী মানুষ বিশেষ করে নারীরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হন। এটি কোনো একক কারণ থেকে নয়, বরং জেনেটিক, পরিবেশ এবং ভাইরাস সংক্রমণের মিশ্র প্রভাবে হয়ে থাকে।

 

কেন হয় মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস?

এমএস-এর সঠিক কারণ এখনো গবেষণার বিষয়। তবে ধারণা করা হয়, পরিবেশগত প্রভাব ও জেনেটিক সংবেদনশীলতার কারণে শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিজেই নিজের স্নায়ু কোষকে ক্ষতি করে। এটি একটি অটোইমিউন প্রতিক্রিয়া, যেখানে শরীর ভুলক্রমে নিজের কোষকে শত্রু ভাবতে শুরু করে।

 

চিকিৎসা ও জীবনযাত্রা 

এমএস এখনও পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য নয়, তবে চিকিৎসার আধুনিক পদ্ধতি যেমন ইমিউনোথেরাপি, ফিজিওথেরাপি এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তন রোগের অগ্রগতি ধীর করে রোগীর জীবনযাত্রা মান উন্নত করতে সাহায্য করে। মানসিক চাপ কমানো, নিয়মিত ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 

সচেতনতা ও ভবিষ্যৎ দিশা 

এই রোগের প্রতি সচেতনতা বাড়ানো এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা নেওয়া খুব জরুরি। এমএস আক্রান্তরা সামাজিক ও মানসিকভাবে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। তাই তাদের প্রতি সহানুভূতি, সমর্থন এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতি মিলিয়ে রোগ নিয়ন্ত্রণের পথ সুগম করা সম্ভব।

 

 মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস হলো এক রহস্যময়, দীর্ঘস্থায়ী স্নায়ু রোগ, যা শরীরের নিজের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাই মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতে আঘাত করে। এই গোপন যুদ্ধে যত তাড়াতাড়ি সচেতনতা এবং চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করা হবে, ততই রোগীর জীবন ভালো রাখা সম্ভব হবে। তাই সময়োপযোগী তথ্য, বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসা এবং সামাজিক সহায়তা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ