ত্বক বাঁচাতে চাইলে, আজই পরীক্ষা করুন আপনার পিএইচ অভ্যাস

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
ত্বক, আমাদের শরীরের সবচেয়ে বড় অঙ্গ এবং প্রথম সারির প্রতিরক্ষক। কিন্তু এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ঠিকঠাক কাজ করবে কিভাবে? এর পেছনে অন্যতম গোপনীয় কারণ হলো ত্বকের পিএইচ (pH) ব্যালান্স, যা সাধারণত ৪.৭ থেকে ৫.৭ এর মধ্যে থাকে। এই সামান্য অ্যাসিডিক অবস্থা ত্বককে রক্ষা করে নানা জীবাণু, দূষণ, এবং পরিবেশগত আঘাত থেকে।
ত্বকের পিএইচ -
পিএইচ বলতে বোঝায় কোন পদার্থের অ্যাসিডিক বা ক্ষারীয় মাত্রা। ত্বকের জন্য আদর্শ পিএইচ হলো সামান্য অ্যাসিডিক, অর্থাৎ ৫ এর কাছাকাছি। এই অ্যাসিডিক পরিবেশ ত্বকের উপর এক ধরনের 'অ্যাসিড ম্যান্টল' তৈরি করে, যা জীবাণু বৃদ্ধিকে বাধা দেয় এবং ত্বককে মৃদু আর্দ্র রাখে।
পিএইচ ভারসাম্যের গুরুত্ব -
যদি এই ভারসাম্য ভেঙে যায়, অর্থাৎ পিএইচ বেড়ে যায় বা কমে যায়, তাহলে ত্বকের স্বাভাবিক প্রতিরক্ষা দুর্বল হয়ে পড়ে। এর ফলে ত্বক শুষ্ক, ফোলা, লাল হয়ে ওঠে এবং ব্রণ, একজিমা বা এলার্জির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া পিএইচ বেড়ে গেলে ত্বকের সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়, যা বয়সের ছাপ দ্রুত বেড়ে যেতে সাহায্য করে।
কীভাবে পিএইচ ব্যালান্স ভেঙে যায়?
⇨ অতিরিক্ত সাবান ও ক্লিনজার ব্যবহারে: অনেক সময় বাজারে পাওয়া সাধারণ সাবান বা ক্লিনজারে উচ্চ পিএইচ থাকে, যা ত্বকের প্রাকৃতিক অ্যাসিডিক স্তরকে ধুয়ে ফেলে।
⇨ রুক্ষ বা অত্যন্ত গরম/ঠাণ্ডা পানি: ত্বকের আর্দ্রতা দ্রুত কমে যায়, পিএইচ ভারসাম্য নষ্ট হয়।
⇨ অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস ও পর্যাপ্ত জলপান না করা: শরীরের অভ্যন্তরীণ সিস্টেম ঠিকমতো কাজ না করলে ত্বকের পিএইচ প্রভাবিত হয়।
⇨ দূষণ ও স্ট্রেস: পরিবেশ দূষণ এবং মানসিক চাপও ত্বকের স্বাভাবিক ভারসাম্য বিঘ্নিত করে।
ত্বকের পিএইচ ঠিক রাখার সহজ পথ -
১. হালকা, পিএইচ-সুষম ক্লিনজার ব্যবহার করুন: যেগুলো ত্বকের প্রাকৃতিক অ্যাসিডিক স্তর বজায় রাখে।
২. গরম পানির পরিবর্তে নরম অথবা সামান্য ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করুন: ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
৩. প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন: হাইড্রেশন ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে অপরিহার্য।
৪. সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন: ভিটামিন সি, ই ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ ফল ও সবজি ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য রক্ষা করে।
৫. স্ট্রেস কমানোর জন্য নিয়মিত বিশ্রাম ও ব্যায়াম করুন।
বিজ্ঞান যেভাবে বলে - ত্বকের পিএইচ বজায় রাখা শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্যের জন্য নয়, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সূচক। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মানুষের ত্বকের পিএইচ সঠিক থাকে, তারা কম প্রদাহজনিত ত্বকের সমস্যায় ভুগে। ত্বকের সঠিক পিএইচ মানে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা, যা ত্বককে সুস্থ ও তরুণ দেখাতে সাহায্য করে।
শেষ কথা, ত্বকের পিএইচ একটি সূক্ষ্ম, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ভারসাম্য। এটি আমাদের ত্বকের 'অদৃশ্য ঢাল', যা রক্ষার জন্য আমাদের সচেতন থাকা জরুরি। সামান্য পরিবর্তনও ত্বকের স্বাভাবিক অবস্থাকে বিপর্যস্ত করতে পারে। তাই ত্বকের পিএইচের যত্ন নেওয়া মানে নিজের সুস্থতার প্রতি দায়বদ্ধ থাকা।
আপনার ত্বকের যত্নে শুধু বাহ্যিক পরিচর্যা নয়, বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে পিএইচ ব্যালান্স বজায় রাখা জরুরি। এটি না শুধুমাত্র ত্বকের আর্দ্রতা ও উজ্জ্বলতা বাড়াবে, বরং দীর্ঘমেয়াদি ত্বকের রোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করবে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।