নিজস্ব সফটওয়্যার না বিদেশি প্রজেক্ট? প্রযুক্তি উন্নয়নে দ্বিমুখী চিত্র

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত গত দশকে দ্রুত গতিতে প্রসার লাভ করেছে। দেশের অর্থনীতিতে প্রযুক্তি সেক্টরের অবদান বেড়েই চলেছে। তবে এই সাফল্যের পেছনে দুই ভিন্ন পথ—দেশীয় আইটি ফার্মের শক্তিশালী কাঠামো এবং আউটসোর্সিং ভিত্তিক কর্মসংস্থানের ভিন্ন ভিন্ন চিত্র সামনে এসেছে। এই দুই পথের মধ্যে দেশের অভ্যন্তরীণ দক্ষতা কীভাবে তৈরি হচ্ছে, তা জানতে চাইলে পাওয়া যায় সমন্বিত ও জটিল একটি চিত্র।
দেশের আইটি ফার্মগুলো এখন শুধু সফটওয়্যার বিকাশেই সীমাবদ্ধ নয়, তারা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই), বিগ ডেটা, ক্লাউড কম্পিউটিং এবং সাইবার সিকিউরিটির মতো আধুনিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও কাজ করছে। এসব প্রতিষ্ঠান নতুন নতুন পণ্য ও সমাধান তৈরি করে দেশে এবং বিদেশে রপ্তানি করছে, যা দেশের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও সুনামের প্রমাণ। তবে এখানেও বড় চ্যালেঞ্জ হল দক্ষ মানবসম্পদের অভাব। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রস্তুত হওয়া তরুণদের দক্ষতা প্রায়শই বর্তমান প্রযুক্তির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, যা আইটি ফার্মগুলোর জন্য বড় সমস্যা।
অপরদিকে, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে হাজার হাজার তরুণ বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সিং এবং বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কাজ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছেন। ২০২৩ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শুধু ফ্রিল্যান্সিং থেকে বছরে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসছে।
আউটসোর্সিং অনেকের জন্য সহজ ও দ্রুত উপার্জনের মাধ্যম, তবে এটি অনেক সময় পার্মানেন্ট স্কিল ডেভেলপমেন্ট বা টেকসই প্রতিষ্ঠানের গড়নের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ থাকে।
দেশীয় আইটি ফার্ম বনাম আউটসোর্সিং—কোথায় কোথায় পার্থক্য?
◑ আইটি ফার্মগুলো দীর্ঘমেয়াদী গবেষণা-উন্নয়ন ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে বিশ্বাসী, যেখানে আউটসোর্সিং নির্ভর প্রকল্প ভিত্তিক ও স্বল্পমেয়াদি কাজের উপর বেশি নির্ভরশীল।
◑ আইটি ফার্মগুলোর কাজের মান এবং প্রোডাক্ট লাইফসাইকেল আউটসোর্সিংয়ের তুলনায় অনেক বেশি স্থায়ী ও গভীর। তবে আউটসোর্সিং তরুণদের জন্য অনেক সময় বেসিক দক্ষতা অর্জনের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে।
চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা - বর্তমানে বাংলাদেশি আইটি সেক্টরের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল দক্ষ জনশক্তির সংকট এবং আধুনিক প্রযুক্তিতে যথেষ্ট প্রশিক্ষণের অভাব। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম চালু করা হলেও, এর বিস্তার এবং গভীরতা এখনও চাহিদার তুলনায় কম।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আউটসোর্সিং ব্যবসায়িক মডেল অনেক সময় শ্রমনিষ্ঠা ও স্বল্পদায়িত্বশীল প্রকল্প নিয়ে কাজ করে, যেখানে আইটি ফার্ম দীর্ঘমেয়াদি বাজারে টিকে থাকার জন্য উদ্ভাবন ও ব্র্যান্ডিংয়ে জোর দেয়। তাই দেশের প্রযুক্তি উন্নয়নে নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে সশক্ত করার দিকে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।
সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি - বাংলাদেশের আইটি সেক্টরের টেকসই উন্নতির জন্য প্রয়োজন একটি সমন্বিত কৌশল—যেখানে আউটসোর্সিং হবে তরুণদের জন্য আয়ের একটি মাধ্যম, আর দেশীয় আইটি ফার্ম গড়ে উঠবে উদ্ভাবনী প্রযুক্তি, গবেষণা ও উন্নয়নে দক্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে। এর জন্য প্রয়োজন শিক্ষাব্যবস্থায় আধুনিকতা আনা, দক্ষ জনশক্তি তৈরির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারের স্পষ্ট নীতিমালা ও সহায়তা।
দেশীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ও আউটসোর্সিং খাতের সমন্বয়ে বাংলাদেশ হতে পারে দক্ষ ও উদ্ভাবনী আইটি নেশন, যা শুধু বিদেশি কাজ গ্রহণ করবে না, নিজস্ব প্রযুক্তি ও সফটওয়্যার বিশ্ববাজারে রপ্তানি করবে।
আইটি ফার্ম বনাম আউটসোর্সিং—এই দ্বন্দ্বের মধ্যে দেশের প্রযুক্তিগত ভবিষ্যত লুকিয়ে আছে। যেখানে আউটসোর্সিং দ্রুত আয় দিতে পারে, সেখানে আইটি ফার্ম দেশের প্রযুক্তি ক্ষমতা ও কর্মসংস্থান গড়ে তুলতে সক্ষম। তাই দেশের জন্য সবচেয়ে সঠিক পথ হলো এই দুইয়ের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য রেখে দক্ষতা ও উদ্ভাবনকে একসাথে এগিয়ে নেয়া।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।