মৌসুমি ফল সংরক্ষণে আধুনিক কোল্ড স্টোরেজ

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
বাংলাদেশের কৃষি খাতের প্রাণস্পন্দন মৌসুমি ফলের উৎপাদন। গ্রীষ্মের আম, শরতের লিচু, বর্ষার জাম ও শীতের কমলালেবু—এসব ফল দেশের কৃষি অর্থনীতির অন্যতম উৎস। তবে এই উর্বরতার মাঝেই লুকিয়ে আছে বড় একটি সমস্যা: ফলের ব্যাপক পরিমাণ নষ্ট হওয়া। কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি বছর মৌসুমি ফলের প্রায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পরিমাণ নানা কারণে নষ্ট হয়ে যায়, যার মধ্যে প্রধানত সঠিক সংরক্ষণের অভাব অন্যতম।
ফল কেটে নেওয়ার পর দ্রুত বিক্রির প্রয়োজনীয়তা এবং ফলের সংরক্ষণে আধুনিক কোল্ড স্টোরেজের অভাব কৃষকদের বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে। ফলের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণ না করলে ফল দ্রুত পচে যায়, গুণগত মান হ্রাস পায় এবং বাজার মূল্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
সাধারণত, ফলের সংরক্ষণে উপযুক্ত তাপমাত্রা ২ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে, যা বজায় রাখতে প্রয়োজন উন্নত কোল্ড স্টোরেজ সুবিধার।
বর্তমানে দেশের অধিকাংশ কোল্ড স্টোরেজ আলু, পেঁয়াজ ইত্যাদির জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। ফল সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজন বিশেষায়িত কোল্ড চেইন সিস্টেম, যা ফলের প্রকারভেদ অনুযায়ী তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। এই প্রযুক্তিগত ব্যবস্থার অভাবে ফলের স্বাভাবিক আয়ু উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।
বিশ্বব্যাপী খাদ্য অপচয় কমানোর জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বিশেষভাবে কোল্ড স্টোরেজ ব্যবহারের ওপর জোর দেয়। বাংলাদেশেও এ ব্যাপারে প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে কৃষকদের জীবনমান উন্নত করার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে, গ্রামীণ অঞ্চলে ছোট ও মাঝারি আকারের সোলার চালিত কোল্ড স্টোরেজ স্থাপন এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হতে পারে। এতে কৃষকরা সহজে তাদের ফল সংরক্ষণ করতে পারবে এবং বাজার দর নিয়ে চাপে পড়বে না।
তাছাড়া, আধুনিক কোল্ড স্টোরেজের মাধ্যমে শুধু ফলের সংরক্ষণ নয়, রপ্তানি মান নিয়ন্ত্রণ, বাজারের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ এবং ভোক্তাদের কাছে তাজা পণ্যের নিশ্চয়তাও নিশ্চিত করা সম্ভব। ফলে, দেশের অর্থনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ হবে।
ফল সংরক্ষণের এই আধুনিক প্রযুক্তি শুধু কৃষকদের জন্য নয়, সমগ্র খাদ্য শৃঙ্খল ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য এক জরুরি পদক্ষেপ। কৃষি গবেষণা সংস্থাগুলোকে এই ক্ষেত্রে আরও গবেষণা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নতুন প্রযুক্তি প্রচারে কাজ করতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকেও প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী নীতি ও আর্থিক সহায়তা।
সব মিলিয়ে বলা যায়, আধুনিক কোল্ড স্টোরেজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা আজকের সময়ের দাবী। ফল নষ্ট হওয়ার হার কমানো হলে কৃষকের আয় বাড়বে, খাদ্য অপচয় কমবে, এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা দৃঢ় হবে—যা বাংলাদেশকে খাদ্য উত্তম একটি দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।