বাঁশের কোষে কী এমন রহস্য, যা বিজ্ঞানকেও ভাবিয়ে তুলেছে?

বাঁশের কোষে কী এমন রহস্য, যা বিজ্ঞানকেও ভাবিয়ে তুলেছে?
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

আমাদের চারপাশে এমন এক প্রকৃতির বিস্ময় আছে, যা প্রতিদিন বেড়ে ওঠে—তাও আবার মানুষের চোখের সামনেই। এই উদ্ভিদ কোনো সাধারণ গাছ নয়, এটি হলো বাঁশ। দৈনিক প্রায় এক মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে এমন উদ্ভিদের সংখ্যা হাতে গোনা। বাঁশের কিছু প্রজাতি দিনে ৮০ থেকে ৯১ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বেড়ে উঠতে পারে। এটি শুধু দ্রুতই নয়, বরং সবচেয়ে গতিশীল ও বহুমুখী ব্যবহারের জন্য বিখ্যাত উদ্ভিদ। কিন্তু প্রশ্ন জাগে—কীভাবে এত দ্রুত বাড়ে বাঁশ?

বাঁশ,ঘাস পরিবারের এক বিস্ময়কর সদস্য

বাঁশ দেখতে যেমন গাছের মতো, বৈজ্ঞানিকভাবে এটি ঘাস (Poaceae family)। পৃথিবীতে প্রায় ১,৪০০ ধরনের বাঁশ প্রজাতি রয়েছে, যার বেশিরভাগই পাওয়া যায় এশিয়ার উষ্ণ ও আদ্র অঞ্চলে—বিশেষ করে চীন, ভারত, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারে।


বৃদ্ধির মূল রহস্য কোথায়?

বাঁশের দ্রুত বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে তিনটি প্রধান বৈজ্ঞানিক কারণ:

☞ সেল ডিভিশন বা কোষ বিভাজনের হার: বাঁশের কান্ডের মেরিস্টেম নামক কোষ-উৎপাদক অঞ্চল অত্যন্ত সক্রিয়। প্রতি ঘণ্টায় হাজার হাজার কোষ বিভাজনের মাধ্যমে নতুন কলা তৈরি হয়।

☞ রাইজোম পদ্ধতি (Rhizome System): বাঁশ মাটির নিচে 'রাইজোম' নামে একটি বিস্তৃত মূল কাঠামো তৈরি করে, যেখান থেকে একাধিক নতুন কান্ড একসাথে জন্মাতে পারে। এর ফলে বাঁশের বিস্তার দ্রুত হয়।

☞ উন্নত ফটোসিন্থেসিস প্রক্রিয়া: বাঁশের পাতা ও কান্ড সূর্যালোক ও পানি শোষণ করে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে শক্তি তৈরি করে। এতে তার বৃদ্ধি আরও বেগ পায়।


গবেষণায় যা মিলেছে- 

চীন, জাপান ও ভারতের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাঁশের বৃদ্ধির গতি বিশ্লেষণ করে দেখেছে, এটি এমন এক প্রজাতি যা জলবায়ু পরিবর্তনের যুগেও দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে। উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় এটি রকেটগতিতে বৃদ্ধি পায়। মাটি ভালো হলে, পর্যাপ্ত পানি ও সূর্যের আলো থাকলে একটি বাঁশ দিনে ৩ থেকে ৪ ফুট পর্যন্ত বাড়তে পারে।


বাঁশ শুধু বন নয়, ভবিষ্যতের ভবন-

এই 'সবুজ স্টিল' এখন টেকসই উন্নয়নের প্রতীক। কাঠের বিকল্প হিসেবে বাঁশ দিয়ে তৈরি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব ঘর, আসবাব, মোবাইল কাভার, কাপড় এমনকি বাইক ফ্রেম। উন্নত বিশ্বে বাঁশ এখন নির্মাণ খাত, জৈবপণ্য ও জ্বালানি উৎপাদনেও ব্যবহৃত হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাঁশ ৫-৬ বছরের মধ্যেই পুনরায় কাটার উপযোগী হয়ে ওঠে। আর কাঠের গাছে যেখানে লাগে ২০ থেকে ৩০ বছর, সেখানে বাঁশ একই কাজে ব্যবহারের জন্য অনেক বেশি কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব।

 

বাংলাদেশেও বাঁশের গুরুত্ব বাড়ছে

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং সিলেট অঞ্চলে বাঁশের উৎপাদন একসময় স্থানীয় ব্যবহারে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন তা রপ্তানিমুখী শিল্পে রূপ নিচ্ছে। সরকারের উদ্যোগে বাঁশকে নতুন করে উদ্ভাবনী কৃষিপণ্য হিসেবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।


বাঁশ একদিকে যেমন প্রাকৃতিক গতির বিস্ময়, তেমনই জলবায়ু সংকট মোকাবেলার হাতিয়ার। যদি আমরা এর ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণের দিকে নজর দিই, বাঁশ হতে পারে আগামী প্রজন্মের জন্য সবুজ ভবিষ্যতের অন্যতম কৌশল। এটি কেবল একটি উদ্ভিদ নয়—এটি টিকে থাকার বিজ্ঞান।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ