হৃদয়ের কানেকশন না ওয়াই-ফাই কানেকশন?—সংযোগের দ্বন্দ্বে আমরা কোথায়?

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
ঢাকার ব্যস্ত শহর থেকে শুরু করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে, আজকের মানুষ এক বিশেষ দুই ধরনের সামাজিক বন্ধনের মধ্যে দ্বিধাগ্রস্ত। একদিকে রয়েছে ভার্চুয়াল বন্ধুত্ব—যা প্রযুক্তির অগ্রগতিতে ঘরকুনো থেকে বিশ্বজনীন বন্ধুত্বে রূপ নিয়েছে। অন্যদিকে, বাস্তব জীবন থেকে আসা সরাসরি মানবিক স্পর্শ এবং সম্পর্কের গভীরতা।
প্রতিদিন গড়ে শতকরা ৬৫% মানুষ অনলাইন সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করেন। এখানে হাজারো 'ফ্রেন্ড' ও 'ফলোয়ার' থাকলেও, একা থাকার অনুভূতি ক্রমশ বাড়ছে।
প্রশ্ন হলো—এই ভার্চুয়াল বন্ধুত্ব কি সত্যিকারের আত্মিক সংযোগ তৈরিতে সক্ষম?
বাস্তব বন্ধুত্বের শক্তিশালী ভূমিকা
মানব মস্তিষ্কের নিউরোসায়েন্স গবেষণা থেকে জানা গেছে, মানুষের স্নায়ুতন্ত্র স্পর্শ, চোখের ভাষা, এবং সরাসরি কথোপকথনে অক্সিটোসিন নামক 'বন্ধুত্বের হরমোন' মুক্তি পায়, যা আমাদের একে অপরের সঙ্গে আবেগগত বন্ধন গড়ে তোলে। এ কারণে, বাস্তব বন্ধুত্ব শুধু মনের শান্তি দেয় না, তা শরীরের স্ট্রেস হরমোন কমিয়ে মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে।
ভার্চুয়াল বন্ধুত্বের সীমাবদ্ধতা-
অন্যদিকে, ভার্চুয়াল যোগাযোগ দ্রুততর হলেও তার আবেগগত গভীরতা তুলনামূলক কম। ডিজিটাল যোগাযোগে মিথস্ক্রিয়ার অভাব এবং সংক্ষিপ্ত বার্তা, ইমোজি বা লাইক দিয়ে আমরা অনেক সময়ই 'সম্পর্কের' বোঝাপড়া ভুল বুঝি। এই ধরনের সম্পর্ক অনেক সময় একাকীত্ব, উদ্বেগ এবং ডিপ্রেশনের কারণও হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভার্চুয়াল বন্ধুত্ব অনেক সময় মানুষের সামাজিক যোগাযোগের বদলে 'সদৃশ বিকল্প' হয়ে দাঁড়ায়, যা দীর্ঘমেয়াদে প্রকৃত সংযোগের অভাব সৃষ্টি করে।
ভার্চুয়াল এবং বাস্তবের মধ্যে সেতুবন্ধন-
বর্তমান সমাজে ভার্চুয়াল এবং বাস্তব বন্ধুত্বের মধ্যকার সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি। প্রযুক্তির মাধ্যমে দূরত্ব মেটানো যায়, কিন্তু নিয়মিত মুখোমুখি কথা বলা, সান্নিধ্য থাকা এবং সময় কাটানো মানসিক শক্তি বাড়ায়। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, সপ্তাহে অন্তত কয়েক ঘণ্টা ডিজিটাল ডিভাইস থেকে দূরে থেকে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে গুণগত সময় কাটানো আবশ্যক।
সমাজ ও প্রযুক্তির পরিবর্তিত চিত্র-
করোনাকালীন সময়কাল ভার্চুয়াল বন্ধুত্বের গুরুত্ব বেড়েছে, অনলাইন ক্লাস, অফিস মিটিং, সামাজিক অনুষ্ঠান—এখন ডিজিটাল। কিন্তু এর ফলে দীর্ঘ সময় ভার্চুয়াল যোগাযোগে সময় কাটানো কতটা মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো, তা নিয়ে গবেষণায় নানামুখী মত প্রকাশ হয়েছে।
ভার্চুয়াল বন্ধুত্ব জীবনকে সহজতর করেছে, তবে বাস্তব বন্ধুত্ব আমাদের আত্মার খাদ্য। প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা বন্ধুত্বের পরিধি বাড়াতে পারি, কিন্তু হৃদয়ের স্পর্শ ও সম্মিলিত হাসির জাদু কিছু দিয়ে যায় না স্ক্রিনের পেছনে। তাই আধুনিক জীবনে ভার্চুয়াল ও বাস্তব বন্ধুত্বের সঠিক সমন্বয়ই হতে পারে সুখী এবং মানসিকভাবে সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।