সাইবার বুলিং ঠেকাতে স্কুল-অভিভাবক একসঙ্গে না দাঁড়ালে চলবে না!

সাইবার বুলিং ঠেকাতে স্কুল-অভিভাবক একসঙ্গে না দাঁড়ালে চলবে না!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

মোবাইল স্ক্রিনে হেসে খেলে বেড়ানো শিশুটিই হঠাৎ গম্ভীর কেন? ক্লাসে প্রথম হওয়া শিক্ষার্থীটি হঠাৎ আত্মগোপনে কেন? অনেক সময় এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাওয়া যায় না সহজে। কিন্তু আজকের বাস্তবতায়, এই পরিবর্তনের পেছনে একটি অদৃশ্য বিষাক্ত হাত কাজ করছে—

অনলাইন বুলিং, বা ডিজিটাল নিপীড়ন।

স্কুলের গণ্ডি ছাড়িয়ে এখন নির্যাতনের পরিসর ঢুকে পড়েছে ফোন, ট্যাব বা কম্পিউটারের স্ক্রিনে। যেখানে নেই প্রতিরোধ, নেই বিচার, আর অনেক ক্ষেত্রেই নেই সচেতনতার সামান্য আলো।


 সাইবার বুলিং কীভাবে ঘটছে?

একটা ট্রল ছবি, অপমানজনক মন্তব্য, ইঙ্গিতপূর্ণ ইনবক্স, মিম বানিয়ে প্রকাশ করা—এসবই অনলাইন বুলিংয়ের অংশ। এটি ঘটতে পারে পরিচিত বন্ধুদের মধ্যেও, আবার ছদ্মনামে অপরিচিতদের মাধ্যমেও। ভয়াবহ বিষয় হলো, এতে আক্রান্ত শিশুটি চুপচাপ সব সহ্য করে, কখনও কাউকে না জানিয়ে।


 শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কি কেবল পাঠশালা? না, এখন সচেতনতার ঘাঁটি হতে হবে

প্রতিদিন শিক্ষার্থী যাচ্ছে স্কুলে, আবার প্রতিদিনই কেউ না কেউ অনলাইনে হেনস্তার শিকার হচ্ছে—কিন্তু শিক্ষক তা জানেন না। এখন সময় হয়েছে, স্কুলে "সাইবার আচরণ" নিয়ে শিক্ষা চালু করার।

সতর্ক নজরদারি ছাড়াও, শিক্ষক ও পরিচালকদের দায়িত্ব:

⇨ শিক্ষার্থীদের অনলাইন আচরণ ও সহনশীলতা শেখানো

⇨ কাউন্সেলিংয়ের সুযোগ সৃষ্টি করা

⇨ অনলাইন হুমকির রিপোর্টিং ব্যবস্থা রাখা

⇨ ডিজিটাল আইনি ধারণা ও আচরণগত ক্লাস চালু করা


প্রযুক্তি হোক বন্ধু, কিন্তু নিয়ন্ত্রিত-

আজকের শিশু-কিশোরেরা অনলাইন দুনিয়ার নাগরিক। কিন্তু সেই নাগরিকত্বে প্রয়োজন নিয়ম-কানুন, আদব-কায়দা। অভিভাবকেরা যদি নিজের সন্তানকে পুরোপুরি ফোনের জগতে ছেড়ে দেন, অথচ জানেন না সে কাদের সাথে কথা বলছে, কী দেখছে—তবে সেই স্বাধীনতা একদিন বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।


অভিভাবকের করণীয়:

⇨ সন্তানদের সঙ্গে ডিজিটাল বিষয়ে খোলামেলা কথা বলা

⇨ অ্যাপ ব্যবহার করছে তা জানা

⇨ দিনে কত সময় অনলাইনে থাকছে তা পর্যবেক্ষণ করা

⇨ সন্তানের আচরণগত পরিবর্তনে সতর্ক থাকা



 

 অনলাইন নির্যাতনের ভয়াবহতা-

অনেক অভিভাবক ভাবেন—"অনলাইন বিষয়গুলো ছোটখাটো, গায়ে লাগে না!" 

অথচ গবেষণায় প্রমাণিত, সাইবার বুলিংয়ের শিকার শিশুদের মধ্যে—

⇨ উচ্চ হারে উদ্বেগ ও বিষণ্নতা

⇨ আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি

⇨ স্কুলে অনুপস্থিতি

⇨ একাকীত্ব ও আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি এই সমস্যাগুলো প্রকটভাবে দেখা যায়।



 

আইন আছে, কিন্তু সচেতনতাই প্রধান অস্ত্র

বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রয়েছে, কিন্তু শিশুদেরকে তা শেখানো হয়নি। স্কুলে এমন শিক্ষা থাকা জরুরি—কীভাবে একজন সাইবার অপরাধীকে চিহ্নিত করা যায়, কোথায় রিপোর্ট করতে হয়, কীভাবে নিজেকে রক্ষা করা যায়।



 

একসঙ্গে না বদলালে কিছুই বদলাবে না-

অনলাইন বুলিং কোনো শহুরে গল্প নয়। এটি আজকের ডিজিটাল বাস্তবতা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অভিভাবক এবং সমাজ যদি একসঙ্গে না জাগে—তাহলে এই মনস্তাত্ত্বিক সহিংসতা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ভিতরে ভিতরে গুঁড়িয়ে দেবে।

এই লড়াই কেবল প্রযুক্তির বিরুদ্ধে নয়, এটি একটি সচেতনতার বিপ্লব—যেখানে প্রতিটি শিশুর নিরাপদ মানসিক বিকাশই আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ