ওটিটির উত্থানে বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র

ওটিটির উত্থানে বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

বাংলাদেশের সিনেমা এখন আর কেবল প্রেক্ষাগৃহনির্ভর নয়—তার গন্তব্য এখন দর্শকের স্মার্টফোন, ট্যাবলেট কিংবা ল্যাপটপ। বিশ্ব ট্রেন্ডের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশেও দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে ওটিটি (OTT - Over the Top) প্ল্যাটফর্ম, যেখানে সিনেমা বা ওয়েব কনটেন্ট উপভোগ করা যায় অনলাইনে, সময় ও জায়গার বাধা ছাড়াই। এই পরিবর্তন শুধু দেখার অভ্যাসে নয়—বরং পুরো সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকেই এক নতুন মাত্রায় পৌঁছে দিচ্ছে।

একটা সময় ছিল শুধু সিনেমা হলে যাওয়া—এখন সময় বদলেছে

এক সময় সিনেমা মানেই ছিল হলে গিয়ে বড় পর্দায় ছবি দেখা, কিন্তু কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে দর্শকের অভ্যাস আমূল বদলে গেছে। স্বাস্থ্যঝুঁকি, সময়ের স্বল্পতা, এবং টিকিটের মূল্য বিবেচনায় বহু মানুষ ঘরে বসেই বিনোদনের পথ বেছে নিচ্ছে। সেই চাহিদাকে সামনে রেখেই গড়ে উঠেছে দেশীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম—

 

চরকি, বঙ্গ, বিনজ, টেলিফোন শো-এর মতো উদ্যোগগুলো, যেগুলো প্রতিনিয়ত আধুনিক নির্মাণশৈলী, সাহসী গল্প ও বৈচিত্র্যময় কনটেন্ট উপস্থাপন করছে।


 গল্প বলার নতুন ভাষা, নতুন বাস্তবতা

ওটিটির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো সৃজনশীল স্বাধীনতা। প্রচলিত সিনেমার তুলনায় ওটিটি কনটেন্টে সেন্সরশিপের চাপ কম, বাজেট নমনীয়, কিন্তু গল্পের গভীরতা ও মানসিক যোগাযোগ অনেক বেশি। তরুণ নির্মাতারা এখন শহরের বাস্তবতা, সামাজিক চাপ, সম্পর্কের টানাপড়েন কিংবা রাজনৈতিক সংকটের মতো বিষয় নিয়ে খোলামেলা কাজ করতে পারছেন।

একদিকে যেমন 'মার্ডার মিস্ট্রি' বা 'সাইকো থ্রিলার' ঘরানার জনপ্রিয়তা বাড়ছে, অন্যদিকে মানুষের জীবনের নানা ছায়াপাত যেন রূপ নিচ্ছে স্ক্রিনে। ফলে 'লোকাল গল্প'ও গ্লোবাল দর্শকের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ পাচ্ছে।


চ্যালেঞ্জও রয়েছে: প্রযুক্তি ও pirated কনটেন্টের হুমকি

ওটিটির এই বিস্তারের পাশাপাশি রয়েছে কিছু বাস্তব চ্যালেঞ্জ। যেমন—চিত্রনাট্য বা স্ক্রিপ্ট লেখায় দক্ষ লোকবলের অভাব, প্রযুক্তিগত মানের ঘাটতি, নিম্নমানের প্রোডাকশন, এবং সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো পাইরেসি। নতুন রিলিজ হওয়া অনেক কনটেন্টই অবৈধভাবে বিভিন্ন সাইটে ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে প্রযোজক ও নির্মাতারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন।

তবে ডিজিটাল আইন ও সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এ চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলার চেষ্টা চলছে।


সুযোগ- আন্তর্জাতিক পরিসরে দেশের সিনেমা

দেশীয় কিছু ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ও কনটেন্ট বাজারে স্থান করে নিয়েছে। 'চরকি'র কয়েকটি মৌলিক সিনেমা যেমন মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের কিছু প্ল্যাটফর্মেও সম্প্রচার হচ্ছে। ফলে নির্মাতাদের জন্য তৈরি হচ্ছে বৈদেশিক আয়ের সুযোগ এবং সিনেমার আন্তর্জাতিকীকরণ।


 সামনের পথ: ভবিষ্যৎ কি একদম 'ডিজিটাল'?

বাংলাদেশের সিনেমা এখন এক সন্ধিক্ষণে। প্রেক্ষাগৃহ সংস্কৃতি একেবারে হারিয়ে যাবে না—কিন্তু আগামী দিনে এটি থাকবে মূলত উৎসব, বিশেষ রিলিজ বা বড় বাজেটের ছবির জন্য। সাধারণ ও সাহসী গল্পগুলো যাবে সরাসরি ওটিটিতে। এজন্য এখনই প্রয়োজন প্রযুক্তি ও মানবসম্পদ উন্নয়ন, কনটেন্ট নীতিমালার আধুনিকীকরণ এবং প্রযোজকদের সৃজনশীলতায় বিনিয়োগ উৎসাহিত করা।


সংক্ষেপে, বাংলাদেশের সিনেমা আর প্রেক্ষাগৃহে সীমাবদ্ধ নেই—সেই গল্প এখন এক ক্লিকে মানুষের হাতে পৌঁছায়। এই পরিবর্তন শুধু মাধ্যম বদলের নয়—বরং এটি এক নতুন শিল্পবিপ্লবের সূচনা।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ