প্রতিদিনের ভুল অভ্যাসেই বাড়ছে ইউরিক অ্যাসিড! আপনি কি নিরাপদ?

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
আপনার হাত-পায়ে ঝিনঝিনে ভাব, সন্ধিতে তীব্র ব্যথা, হাঁটতে গেলে কষ্ট—এগুলো কি বয়সের কারণে ভাবছেন? সাবধান হোন। কারণ এই সমস্যাগুলোর পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে এক নিরব রোগ: উচ্চমাত্রার ইউরিক অ্যাসিড। এটি এমন এক স্বাস্থ্যঝুঁকি যা আপনি টের পাওয়ার আগেই শরীরের গাঁট থেকে কিডনি পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে পারে রোগের শিকড়। চিকিৎসকেরা একে বলেন "স্লো সাইলেন্ট ড্যামেজার"।
ইউরিক অ্যাসিড কী এবং কেন এটা বিপজ্জনক?
দেহে প্রোটিনজাত খাবার ভাঙার সময় তৈরি হয় পিউরিন, যা পরবর্তীতে রূপ নেয় ইউরিক অ্যাসিডে। স্বাভাবিকভাবে এই অ্যাসিড কিডনির মাধ্যমে প্রস্রাবে বেরিয়ে যায়। কিন্তু যখন এর উৎপাদন অতিরিক্ত হয় অথবা কিডনি ঠিকমতো কাজ না করে—তখন রক্তে ইউরিক অ্যাসিড জমে যেতে থাকে। একে বলে Hyperuricemia।
এই অতিরিক্ত অ্যাসিড জমে গিয়ে হাড়ের সন্ধিতে স্ফটিক তৈরি করে — যার ফলে শুরু হয় ব্যথা, জ্বালা, ফুলে যাওয়া ও অচলতা। দীর্ঘমেয়াদে এই সমস্যা রূপ নিতে পারে গাউট, কিডনি স্টোন, উচ্চ রক্তচাপ এমনকি কিডনি বিকল-এর মতো মারাত্মক রোগে।
আপনি কি ইউরিক অ্যাসিড বাড়ার উপসর্গে ভুগছেন?
⇨ পায়ের বুড়ো আঙুল বা গোড়ালিতে হঠাৎ তীব্র ব্যথা
⇨ সন্ধিতে ফুলে যাওয়া বা লালচে ভাব
⇨ হাত-পায়ে ঝিনঝিনে অনুভব বা অসাড়তা
⇨ অকারণে ক্লান্তি, মাথা ভার, বিরক্তিভাব
⇨ প্রস্রাবে জ্বালাভাব বা কিডনি এলাকায় অস্বস্তি
এই উপসর্গগুলোর যেকোনোটি থাকলে দেরি না করে পরীক্ষা করান রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা।
প্রতিরোধই শ্রেষ্ঠ উপায় — কীভাবে আপনি নিয়ন্ত্রণে আনবেন ইউরিক অ্যাসিড?
১. খাদ্যাভ্যাসে সতর্কতা:
এড়িয়ে চলুন: লাল মাংস, কলিজা বা যকৃৎজাত খাবার, চিংড়ি, সার্ডিন জাতীয় সামুদ্রিক মাছ, অতিরিক্ত ডাল, সফট ড্রিংক
খাবেন: আঁশযুক্ত শাকসবজি, চেরি, আপেল, লেবু, ওটস, কম ফ্যাটযুক্ত দুধ বা টক দই
২. পানি পান করুন পর্যাপ্ত:
প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি শরীরের মেটাবলিজম উন্নত করে এবং ইউরিক অ্যাসিড প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দিতে সাহায্য করে।
৩. শরীরচর্চা ও ওজন নিয়ন্ত্রণ:
হাঁটাহাঁটি, সাইকেল চালানো বা হালকা ব্যায়াম প্রতিদিন করুন। অতিরিক্ত ওজন ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে বাধা দেয় — তাই নিয়মিত একটিভ থাকা জরুরি
৪. ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকুন:
এই দুটি উপাদান কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাস করে, যা ইউরিক অ্যাসিড জমার কারণ হয়ে দাঁড়ায়
৫. প্রয়োজনে চিকিৎসা:
ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শে Allopurinol বা Febuxostat জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা হয়
তবে স্ব-চিকিৎসা নয়, প্রতিটি ওষুধ নিতে হবে বিশ্লেষণ করে ডাক্তারের নির্দেশনায়
বিজ্ঞান কী বলছে ইউরিক অ্যাসিড নিয়ে?
গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়মিত ৭ mg/dL-এর ওপরে থাকে, তাদের গাউট, কিডনি রোগ এমনকি কার্ডিওভাসকুলার ঝুঁকিও অনেক বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বলছে, ইউরিক অ্যাসিডের নিয়মিত মনিটরিং ৪০ ঊর্ধ্ব মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যাদের ফ্যাটি লিভার, হাই ব্লাড প্রেশার বা ডায়াবেটিস আছে।
ইউরিক অ্যাসিড একটি সময়ের পর নিঃশব্দে শরীরের ভিতরে জটিলতা তৈরি করতে থাকে। কিন্তু সচেতনতা ও দৈনন্দিন জীবনযাপনে সামান্য পরিবর্তন এই ঘাতককে রুখে দিতে পারে সহজেই। অন্য কোনো ব্যথা না বাড়ার আগে, আজই জীবনযাপন বদলান। শরীরের সংকেত শুনুন, কারণ এই সংকেতই ভবিষ্যতের স্বাস্থ্য নির্ধারণ করে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।