আওয়ামী শাসনামলে রিজার্ভ বৃদ্ধি ছিল 'ফাঁকা বুলি’

আওয়ামী শাসনামলে রিজার্ভ বৃদ্ধি ছিল 'ফাঁকা বুলি’
  • Author, এ. এন. জাহান
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

গত সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেলেও, এর বড় অংশই ছিল ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের 'ফাঁকা বুলি'। এই সময়ে বৈদেশিক ঋণ, বিশেষ করে স্বল্পমেয়াদি ঋণও বেড়েছে মাত্রাতিরিক্ত হারে, যার ফলে দেশের অর্থনীতি এক গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এই চিত্র উঠে এসেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার যখন ক্ষমতায় আসে, তখন দেশের বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ ছিল ৭০০ কোটি ডলার। ২০২২ সালের আগস্টে তা বেড়ে ৪ হাজার ৮০৬ কোটি ডলারে দাঁড়ায়, যা ৫৮৬.৫৭ শতাংশ বৃদ্ধি। এরপর থেকে বৈশ্বিক মন্দার অজুহাতে রিজার্ভ কমতে শুরু করে। তবে রিজার্ভ কমার অন্যতম একটি প্রধান কারণ অর্থ পাচার।


আবার, ২০০৯ সালের শুরুতে মোট বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ছিল ২ হাজার ২৭৯ কোটি ডলার। গত বছরের জুলাইয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলারে, যা ৩৬৩.১৯ শতাংশ বৃদ্ধি। অর্থাৎ, রিজার্ভ বৃদ্ধির হারের অর্ধেকের বেশি হারে ঋণ বেড়েছে। এর মধ্যে স্বল্পমেয়াদি ঋণ বেড়েছে ১ হাজার ২৭৫ শতাংশ, যা রিজার্ভের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেছে। ২০০৯ সালে স্বল্পমেয়াদি ঋণ ছিল ১৬০ কোটি ডলার, যা ২০২৩ সালের শেষদিকে ২ হাজার ২০০ কোটি ডলারে উঠেছিল। বর্তমানে এটি ১ হাজার ৩০০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে।


এখানে উল্লেখ্য, আইএমএফের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে যদি কোনো তহবিল গঠন করা হয় বা মজুতের বাইরে অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা হয়, তবে তা রিজার্ভ থেকে বাদ দিতে হবে। একই সঙ্গে সরকারের স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক দায় (যেমন ৩-৪ মাসের মধ্যে পরিশোধযোগ্য ঋণ ও এলসির দায়) রিজার্ভ থেকে বাদ দিতে হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার তা না করে গ্রস রিজার্ভকেই মূল রিজার্ভ হিসেবে দেখাতে শুরু করে।


২০১৫ সালে আইএমএফের একটি মিশন ঢাকায় এ বিষয়ে আপত্তি তোলে এবং নিট রিজার্ভ প্রকাশের কথা বলে। তাদের মতে, বাংলাদেশের রিজার্ভ যেভাবে বেশি দেখানো হচ্ছে, তাতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিভ্রান্তি দেখা দিতে পারে। তবে সরকার তখন এটি আমলে নেয়নি।


২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বৈশ্বিক মন্দা দেখা দিলে এবং বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় বেড়ে গেলে সরকার আইএমএফের কাছে ঋণ সহায়তা চায়। তখন ঋণের শর্ত হিসাবে আইএমএফ নিট রিজার্ভ প্রকাশের কথা বলে। দীর্ঘ দরকষাকষির পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক সীমিত আকারে নিট রিজার্ভ প্রকাশ করতে বাধ্য হয়।

২০২৪ সালের ২ জুলাই প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, ওই সময়ে নিট রিজার্ভ ছিল ১ হাজার ৬৭৭ কোটি ডলার, যেখানে আইএমএফের স্বীকৃত পদ্ধতি অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ১৭৭ কোটি ডলার এবং গ্রস রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৬৮৮ কোটি ডলার। অর্থাৎ, গ্রস রিজার্ভের চেয়ে নিট রিজার্ভ ১ হাজার ১১ কোটি ডলার বা ৬০.২৯ শতাংশ কম ছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার আরও অনেক স্বল্পমেয়াদি দায় গোপন করেছিল, যা সামনে আনলে রিজার্ভ আরও কম হতো।



২০২০ সালে তীব্র সমালোচনা উপেক্ষা করে সরকার রিজার্ভ থেকে ডলার নিয়ে বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করে। এর মধ্যে ৬০০ কোটি ডলার নিয়ে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ফান্ড গঠন করে পায়রা বন্দর ড্রেজিংয়ের জন্য বৈদেশিক মুদ্রায় ৫৭ কোটি ইউরো ঋণ দেওয়া হয়।
এছাড়া, রপ্তানি খাতকে সহযোগিতা করতে রিজার্ভ থেকে ৭০০ কোটি ডলার নিয়ে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের আকার বাড়ানো হয়। আইএমএফের নিয়ম অনুযায়ী, এই অর্থ রিজার্ভ থেকে বাদ দেওয়ার কথা থাকলেও সরকার তা দেয়নি।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ