উচ্চশিক্ষায় উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন, নারী শিক্ষা কি পেয়েছে সেই স্বপ্নের ঠিকানা?

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
উচ্চশিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ আজকের বাংলাদেশের এক আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গত দুই দশকে নারীর শিক্ষাগত অগ্রগতি নজরকাড়া হলেও, এই উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে কিছু চ্যালেঞ্জ ও বৈষম্যের ছায়াও রয়ে গেছে। এখন শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুমে নারীর উপস্থিতি বৃদ্ধি নয়, তাদের যোগ্যতা, নেতৃত্বগুণ এবং পেশাগত ক্ষেত্রে অবদান নিশ্চিত করাও এক জরুরি প্রেক্ষাপট।
সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, নারীদের ভর্তি হার প্রায় ৪৫-৫০ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করছে। এটি ইতিবাচক দিক হলেও STEM (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত) ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ এখনও সীমিত। প্রকৌশল ও প্রযুক্তির কোর্সগুলোতে নারীদের সংখ্যা তুলনামূলক কম, যা শিক্ষাগত বৈষম্যের এক বাস্তব চিত্র তুলে ধরে।
গ্রামীণ ও শহুরে নারীর শিক্ষাগত ভিন্নতা এখানেও প্রতিফলিত হয়। শহরে উচ্চশিক্ষায় যাওয়া নারীরা সুযোগ-সুবিধা ও সাপোর্ট পেয়ে আগ্রহী হলেও, গ্রামীণ অঞ্চলের মেয়েরা প্রায়ই সাংস্কৃতিক বাধা, আর্থিক সংকট ও নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। বিশেষ করে মেয়েদের উচ্চশিক্ষার জন্য শহরে পাঠানো নিয়ে পরিবারিক দ্বিধা ও সামাজিক রীতিনীতি আজও বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে।
আরও গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, উচ্চশিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণের পেছনে পারিবারিক ও সামাজিক ভূমিকার প্রভাব। অনেকে এখনও মনে করেন মেয়ের প্রধান দায়িত্ব পরিবার ও সন্তান লালনপালন, আর তাই শিক্ষার ক্ষেত্রেও সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়। এতে শিক্ষিত নারীর সংখ্যা বাড়লেও, তাদের পেশাগত ক্ষেত্রে উন্নয়ন ধীরগতি হয়।
তবে আগের গতকালের তুলনায় এখন নারীর শিক্ষায় প্রবেশের সুযোগ অনেক বেড়েছে। সরকারি বৃত্তি, মেয়েদের জন্য বিশেষ হল ব্যবস্থা, অনলাইন শিক্ষার প্রসার, এবং নারী শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন এনজিও ও উন্নয়ন সংস্থার উদ্যোগ এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। বিশেষ করে ডিজিটাল শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ বেড়ে যাওয়ায় ক্যারিয়ার গঠনে নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও নারীর নেতৃত্বে আসার প্রবণতা বাড়ছে। নারী শিক্ষার্থী শুধু ভালো নম্বরেই নয়, ক্লাব, গবেষণা ও সামাজিক কর্মকাণ্ডেও সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে। এটা পরিণত হচ্ছে নারীর ক্ষমতায়নের এক অনন্য উদাহরণ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, উচ্চশিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির জন্য দরকার আরও ব্যাপক সমর্থন ব্যবস্থা। যেমন, পরিবার-সমাজে শিক্ষার গুরুত্ব বাড়ানো, মেয়েদের নিরাপদ পরিবহন ও আবাসনের ব্যবস্থা, আর্থিক সহায়তা বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে নারীর শিক্ষাগত ও পেশাগত উন্নতি নিশ্চিত করা।
উচ্চশিক্ষায় নারীর প্রবেশাধিকার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই প্রতিবন্ধকতাগুলো কাটিয়ে ওঠা না গেলে, দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন প্রভাবিত হবে। কারণ নারীর শিক্ষা শুধু ব্যক্তিগত উন্নতি নয়, তা সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি।
নারী শিক্ষার যাত্রা আজ ইতিবাচক হলেও তা নিখুঁত নয়। প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা, সামাজিক সংস্কার এবং সুশৃঙ্খল নীতি, যাতে শিক্ষিত নারী সবার জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়ায়, আর দেশের উন্নয়ন পথে এক নতুন দিগন্ত খুলে যায়।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।