কর্মীদের কর্মঘণ্টা কমালে বাড়ে উৎপাদনশীলতাঃ নতুন গবেষণা

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
নতুন গবেষণার ফলে বহুল প্রচলিত অফিস শিডিউল সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা এর কার্যকারিতা নিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক আন্তর্জাতিক গবেষণায় দেখা গেছে, কর্মঘণ্টা কমালে কর্মীরা শুধু সুস্থই থাকেন না, বরং তাদের কাজের প্রতি মনোযোগও বাড়ে।
অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, আয়ারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মোট ১৪১টি প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২ হাজার ৯০০ কর্মীর ওপর ছয় মাসব্যাপী একটি পরীক্ষামূলক গবেষণা পরিচালনা করা হয়। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা সপ্তাহে পাঁচ দিনের পরিবর্তে চার দিন কাজ করেছেন। এক্ষেত্রে তাদের কোনো বেতন কাটা হয়নি।
নেচার হিউম্যান বিহেভিয়ার জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, চার দিনের কর্মসপ্তাহ কর্মীদের মধ্যে কাজের ক্লান্তি (বার্নআউট) কমিয়েছে, তাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটিয়েছে এবং কাজের সন্তুষ্টি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়িয়েছে।
অন্যদিকে, যারা আগের মতোই সপ্তাহে পাঁচ দিন কাজ করেছেন – এমন ১২টি প্রতিষ্ঠানের ২৮৫ কর্মীর মধ্যে এই ধরনের কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যায়নি।
নিউজিল্যান্ডের ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ পাউলা ও’কেন বলেন, এই ফলাফল শুধু চার দিনের কর্মসপ্তাহ নয়, বরং নমনীয় ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক কর্মসূচির প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরে।
তিনি বলেন, "ঐতিহ্যগতভাবে কাজের সময়কে উৎপাদনশীলতার মানদণ্ড হিসেবে ধরা হয়। তবে বাস্তবতা হলো, বিশ্রাম পাওয়া ও সুস্থ কর্মী কম সময়ে বেশি উৎপাদন করতে পারেন।"
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, যারা ৮ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় কম কাজ করেছেন, তারা বার্নআউট কমানোর পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য ও কাজের সন্তুষ্টিতে সবচেয়ে বেশি উন্নতি অনুভব করেছেন।
যারা ১ থেকে ৪ ঘণ্টা বা ৫ থেকে ৭ ঘণ্টা কম কাজ করেছেন, তাদের উন্নতি তুলনামূলকভাবে কম ছিল। শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতিও সবচেয়ে কম হয়েছে।
গবেষকরা বলছেন, বিষয়টি বুঝতে আরও দীর্ঘমেয়াদী গবেষণার প্রয়োজন।
নিউজিল্যান্ডের মানসিক স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান আমব্রেলা ওয়েলবিয়িংয়ের প্রধান মনোবিজ্ঞানী ড. ডগল সাদারল্যান্ড বলেছেন, "গত দশকে চার দিনের সপ্তাহ নিয়ে ইতিবাচক তথ্য পাওয়া গেলেও অনেক গবেষণাই নিয়ন্ত্রণ বা দীর্ঘমেয়াদি তথ্যের অভাবে সীমাবদ্ধ ছিল। এই গবেষণা একটি নতুন মানদণ্ড তৈরি করেছে।"
এই গবেষণায় অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো 'ফোর ডে উইক গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ'-এর আওতায় কর্মীদের শতভাগ বেতন বজায় রেখে কাজের সময় ৮০ শতাংশ কমিয়েছে। এতে কর্মীদের সুস্থতা, কর্মক্ষেত্রে সন্তুষ্টি এবং উৎপাদনশীলতা সবই বেড়েছে।
গবেষণায় কর্মীদের সেলফ রিপোর্ট তথা আত্মপ্রতিবেদন পদ্ধতি ব্যবহার করা হলেও, গবেষকরা ছয় মাসের ব্যবধানে দুই দফা জরিপ করে এর বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করেছেন, যাতে কর্মীরা আগের উত্তর ভুলে গিয়ে সুনির্দিষ্ট বাস্তবতার ওপর ভিত্তি করে উত্তর দেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব কর্মী বাস্তবে কম সময় কাজ করেছেন, তাদের মানসিক উন্নতি সুস্পষ্ট। তবে কোম্পানির সকল স্তরে এই একই ফলাফল পাওয়া যায়নি। এমনকি কোনো প্রতিষ্ঠানে গড়ে কত ঘণ্টা কম কাজ হয়েছে, তার সঙ্গে সকল পর্যায়ের কর্মীদের সুস্থতার উন্নতির সরাসরি সম্পর্ক পাওয়া যায়নি।
গবেষণাপত্রে আরো উল্লেখ করা হয়, প্রতিষ্ঠানের কাজ মোট কত ঘণ্টা কমেছে, সেটা বিষয় নয়। বরং যেসব কর্মী বাস্তবে কম সময় কাজ করেছেন, তাদের উন্নতিই সবচেয়ে বেশি হয়েছে। এখানে ট্রায়াল কোম্পানিগুলোর (যেসব প্রতিষ্ঠানে সপ্তাহে চার দিন কাজ করতে হয়) সম্মিলিতভাবে কাজের ধরনে আনা পরিবর্তনগুলো কিছু বাড়তি উপকার দিয়েছে, যা কন্ট্রোল কোম্পানিগুলোর (যেসব প্রতিষ্ঠানে সপ্তাহে পাঁচ দিন কাজ করতে হয়) কর্মীরা পাননি।
মনোবিজ্ঞানী সাদারল্যান্ড বলেন, "শুধু কাজের সময় কমিয়ে উপকার পাওয়া সম্ভব নয়। এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মসূচি শুরুর আগে সঠিক প্রশিক্ষণ ও পরিকল্পনা করেছে। যেমনঃ অপ্রয়োজনীয় মিটিং বা কাজ বাদ দেওয়া, কাজের প্রক্রিয়া সরলীকরণ ইত্যাদি।"
তার মতে, কর্মীদের সুস্থ রাখতে এবং কাজের মান বজায় রাখতে স্মার্টভাবে কাজ করাই আজকের সময়ে সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।