পোড়া স্থানে বরফ দিতে বিশেষজ্ঞদের নিষেধাজ্ঞা

পোড়া স্থানে বরফ দিতে বিশেষজ্ঞদের নিষেধাজ্ঞা
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

শরীরের কোনো অংশে তাপ লাগলে বা পুড়ে গেলে দ্রুত আরাম পেতে অনেকেই পোড়া জায়গায় বরফ ব্যবহার করেন। কিন্তু চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রচলিত ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। বরং পোড়া স্থানে সরাসরি বরফ ব্যবহার করলে ক্ষতির মাত্রা আরো বাড়তে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পোড়া স্থানে বরফের অতিরিক্ত ঠান্ডা ত্বকের টিস্যুকে আরো ক্ষতিগ্রস্ত করে। বরফ দিলে রক্তনালী সংকুচিত হয়ে রক্তপ্রবাহ কমে যায়, যা ত্বকের কোষগুলোতে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ও পুষ্টি পৌঁছাতে বাধা দেয়। এতে নিরাময় প্রক্রিয়া ধীর হয়ে পড়ে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

যদিও বরফ সাময়িকভাবে ব্যথা কমায়, তবে এটি ত্বকের প্রকৃত ক্ষতিকে আড়াল করে দেয়, যা সঠিক চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটায়।

পুড়ে গেলে বর্জনীয়- 
১. পোড়া স্থানে বরফ, মাখন, তেল বা যেকোনো ঘরোয়া উপাদান লাগানো যাবে না।

2. পোড়া স্থানে তৈরি হওয়া ফোসকা ফাটানো যাবে না, কারণ ফোসকা সংক্রমণ থেকে ত্বককে রক্ষা করে।

পোড়ার পরপর করণীয়--
১. প্রথমে আক্রান্ত ব্যক্তিকে পোড়ার উৎস থেকে সরিয়ে নিন এবং তার গায়ে থাকা গয়না বা আঁটসাঁট কাপড় খুলে ফেলুন।

২. পোড়া স্থানে ঠান্ডা (তবে বরফ ঠান্ডা নয়) পানি ১০-২০ মিনিট ধরে ঢালতে থাকুন।

৩. হালকা সাবান ও পানি দিয়ে পোড়া স্থান আলতো করে পরিষ্কার করুন এবং একটি পরিষ্কার কাপড় দিয়ে শুকিয়ে নিন।

৪. পোড়া জায়গাটি একটি নন-স্টিক ব্যান্ডেজ দিয়ে ঢেকে রাখুন।

৫. ব্যথা কমাতে প্রয়োজনে প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন গ্রহণ করতে পারেন।

৬. সংক্রমণ প্রতিরোধে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক মলম ব্যবহার করতে পারেন।

ফোসকা হলে করণীয়-
ফোসকা না ফাটানোই উত্তম। যদি ফোসকা ফেটে যায়, তবে সেই স্থানটি জীবাণুমুক্ত করে নতুন ব্যান্ডেজ ব্যবহার করুন।

যখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন-
শরীরের কোথাও পুড়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হলো আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিতে হবে কিনা।
আসুন জেনে নেই কখন পোড়া ব্যক্তির দ্রুত চিকিৎসকের সাহায্য প্রয়োজনঃ

১) যদি পোড়ার স্থান মুখ, হাত, পা বা যৌনাঙ্গে হয়।

২) যদি পোড়ার আকার ৩ ইঞ্চির বেশি হয়।

৩) যদি ত্বক সাদা, কালো বা চামড়ার মতো দেখায় (তৃতীয়-ডিগ্রি পোড়া)।

৪) যদি জ্বর, অতিরিক্ত ব্যথা বা লালভাব দেখা দেয়, যা সংক্রমণের লক্ষণ হতে পারে।

দূর্ঘটনা এড়াতে এবং সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পোড়ার ধরণ সম্পর্কে  পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে।
চিকিৎসাবিজ্ঞানে পোড়াকে মূলত তিন ভাগে ভাগ করা হয়:

প্রথম-ডিগ্রিঃ ত্বকের ওপরের স্তরে ক্ষতি হয়, হালকা লাল হয় এবং ব্যথা থাকে। এটি দ্রুত সেরে যায়।

দ্বিতীয়-ডিগ্রিঃ ত্বকের নিচের স্তর পর্যন্ত ক্ষতি হয়, ফোসকা পড়ে এবং তীব্র ব্যথা হয়। এটি সেরে যেতে কিছুটা সময় লাগে।

তৃতীয়-ডিগ্রিঃ ত্বকের সব স্তর আক্রান্ত হয়। ত্বক সাদা বা ঝলসে যাওয়া কালো দেখায়। এই ধরনের পোড়ায় ব্যথা তুলনামূলক কম হলেও এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন।

বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়ে বলেছেন, সতর্কতার সঙ্গে নেওয়া প্রাথমিক পদক্ষেপই পোড়ার পর দ্রুত সুস্থতার গতি নির্ধারণ করে।
তাই ভুল তথ্যের ভিত্তিতে বরফ ব্যবহার না করে, নিরাপদ উপায়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নিন। বরফের বদলে ঠান্ডা পানি ব্যবহারে দ্রুত আরাম পাওয়া সম্ভব এবং তা নিরাপদও।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ