বীজহীন ফলের পেছনের বিজ্ঞান—উপকার নাকি হুমকি?

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
আমাদের খাদ্যতালিকায় ফলের জায়গা আলাদা। কিন্তু বীজহীন ফলের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। বীজহীন তরমুজ, আঙ্গুর কিংবা লেবুর স্বাদ ও ব্যবহার যে কতটা সহজ ও আনন্দদায়ক, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে, এই বীজহীন ফলের পেছনে রয়েছে এক জটিল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, যা শুধু সুবিধা নয়, অনেক সময় প্রশ্নও তোলে।
বীজহীন ফল তৈরি হয় কীভাবে?
বীজহীন ফল মূলত 'জেনেটিক প্রকৌশল' বা 'জিন পরিবর্তনের' মাধ্যমে তৈরি হয়। সাধারণত তরমুজ, আঙ্গুরের মতো ফলের বীজ থাকে যা গাছের প্রজননের জন্য প্রয়োজন। কিন্তু বীজহীন ফল তৈরি করতে বিজ্ঞানীরা গাছের ডিএনএ'তে এমন পরিবর্তন আনে, যাতে বীজ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।
এই প্রক্রিয়াটি 'ট্রিপলয়েড প্রযুক্তি' নামে পরিচিত। এতে তিনটি জেনেটিক সেট মিশিয়ে এমন প্রজাতি তৈরি হয় যা বীজ গড়তে অক্ষম। ফলে ফল হয় মিষ্টি, সুন্দর ও বীজহীন। আধুনিক গবেষণায় অন্যান্য পদ্ধতিও ব্যবহৃত হচ্ছে, যেখানে জিন প্রযুক্তি দিয়ে নির্দিষ্ট জেনকে নিষ্ক্রিয় করে বীজ তৈরি বন্ধ রাখা হয়।
বাজারে জনপ্রিয়তার কারণ
বীজহীন ফল খাওয়া অনেকটাই আরামদায়ক, বিশেষ করে বাচ্চা ও বয়স্কদের জন্য। বাজারে এর চাহিদা বেড়ে যাওয়ার এক প্রধান কারণ হলো – সময় বাঁচানো, খাওয়ায় সুবিধা, এবং আকারে আকর্ষণ। বীজ না থাকার কারণে এসব ফল কাটতেও সহজ এবং পরিবহনেও কম ঝামেলা হয়।
স্বাস্থ্য ঝুঁকি কি নেই?
জেনেটিক পরিবর্তিত কোনো খাদ্য সাধারণত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও খাদ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদনের পর বাজারে আসে। তবে, দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে গবেষণা এখনও চলছে। যদিও এখন পর্যন্ত বীজহীন ফল সরাসরি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হয়নি, তবুও কিছু গবেষক সতর্ক করে দেন—জেনেটিক ম্যানিপুলেশন ও রাসায়নিক প্রক্রিয়ার কারণে অজানা প্রভাব হতে পারে।
পরিবেশ ও কৃষি ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ
বীজহীন ফল উৎপাদন মানে ঐ প্রজাতির গাছ স্বাভাবিকভাবেই বংশবিস্তারে অক্ষম। কৃষকরা একরকম 'কৃত্রিম প্রজনন' পদ্ধতির ওপর নির্ভরশীল হন, যা বংশগত বৈচিত্র্যকে হ্রাস করতে পারে। এছাড়াও, অতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহার বা একজাতীয় ফলের ওপর কৃষির নির্ভরশীলতা পরিবেশে ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।
বৈজ্ঞানিক ও কৃষি সম্প্রদায়ের ভাবনা
বীজহীন ফলের গবেষণা ও উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে। বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছেন আরও নিরাপদ, বেশি পুষ্টিকর ও টেকসই ফল তৈরি করতে। তবে তারা সতর্ক যে, এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হলেও প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি।
বীজহীন ফলের প্রযুক্তি আধুনিক কৃষির এক দুর্দান্ত অগ্রগতি। এটি আমাদের খাদ্য জীবনকে সহজ ও সুখকর করেছে। কিন্তু এই সুবিধার সঙ্গে আমাদের দায়িত্বও বেড়েছে—প্রযুক্তির সুফল গ্রহণের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত প্রভাব বুঝে সচেতন হওয়া জরুরি।
সুতরাং, বীজহীন ফলের স্বাদ উপভোগ করুন, কিন্তু জেনেটিক প্রকৌশলের এই জাদুর পেছনে থাকা সম্ভাব্য ঝুঁকিকেও মাথায় রাখুন। প্রযুক্তির উন্নতি এবং নিরাপত্তার মধ্যকার সঠিক সমন্বয়ই হবে আগামী দিনের চাবিকাঠি।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।