অচিরেই চাঁদ হবে বাগান,মানব ইতিহাসে এক যুগান্তকারী মাইলফলক!

অচিরেই চাঁদ হবে বাগান,মানব ইতিহাসে এক যুগান্তকারী মাইলফলক!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

দীর্ঘদিন ধরে চাঁদকে মানুষ দেখেছে রহস্যে ঘেরা এক নিষ্প্রাণ গ্রহ হিসেবে। কিন্তু ২০২২ সালে সেই ধারণায় নাড়া দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা তুলে আনেন এক যুগান্তকারী আবিষ্কার। পৃথিবীর বাইরে, চাঁদের ধুলোময়, নিষ্প্রাণ, জীবাণুমুক্ত এবং জলের স্পর্শহীন এক টুকরো মাটিতে প্রথমবারের মতো গজায় সবুজ অঙ্কুর। মহাকাশে কৃষিকাজের সম্ভাবনা এই প্রথম বাস্তবে রূপ নেয়। এই বিপ্লবাত্মক গবেষণা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। তারা ব্যবহার করেছেন NASA'র অ্যাপোলো মিশনের মাধ্যমে চাঁদ থেকে সংগ্রহ করা মাত্র ১২ গ্রাম মূল চাঁদের মাটি (lunar regolith)। চন্দ্রপৃষ্ঠের এই মূল্যবান মাটি সংগ্রহ করা হয়েছিল অ্যাপোলো ১১, ১২ ও ১৭ মিশনের সময়। গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু ছিল একটি সাধারণ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ গাছ: Arabidopsis thaliana। এই ক্ষুদ্র উদ্ভিদটি বেছে নেওয়া হয় কারণ এটি দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং জেনেটিক বিশ্লেষণে খুবই উপযোগী।

কিভাবে চালানো হয় গবেষণা?

গবেষকেরা চাঁদের মাটি সমানভাবে ১২টি ছোট পাত্রে ভাগ করেন। প্রতিটি পাত্রে প্রয়োজনীয় পুষ্টি দ্রবণ যোগ করে রোপণ করা হয় Arabidopsis গাছের বীজ। তুলনামূলক বিশ্লেষণের জন্য একই ধরনের পরীক্ষা চলে পৃথিবীর কঠিন পরিবেশ থেকে সংগৃহীত মাটি এবং চাঁদের অনুকরণে তৈরি করা 'সিমুল্যান্ট' মাটিতেও।

প্রথম চমক আসে দ্রুতই—চাঁদের মাটিতে বপন করা সবগুলো বীজই অঙ্কুরিত হয়। অর্থাৎ, চাঁদের মাটি গাছের বীজ অঙ্কুরোদগমে সম্পূর্ণ অক্ষম নয়। তবে অঙ্কুরোদগমের পরপরই শুরু হয় বাস্তবতার কঠিন পরীক্ষা।

 

গাছগুলো বেড়ে উঠলেও তুলনামূলকভাবে ছিল ধীরগতির, আকারে ক্ষুদ্র এবং শারীরিক দিক থেকে দুর্বল। উদ্ভিদগুলোতে দেখা দেয় তীব্র 'স্ট্রেস'-এর লক্ষণ। বিজ্ঞানীরা পরে জেনেটিক বিশ্লেষণ করে বুঝতে পারেন, এই গাছগুলো এমন কিছু প্রতিরক্ষা-জিন সক্রিয় করছিল যা সাধারণত লবণাক্ততা, ধাতব বিষক্রিয়া বা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস প্রতিহত করতে ব্যবহৃত হয়।

বিস্ময়ের বিষয়, অ্যাপোলো ১১ মিশনের মাধ্যমে সংগৃহীত উপরের স্তরের চাঁদের মাটিতে জন্মানো গাছগুলোর অবস্থা সবচেয়ে খারাপ ছিল। একটি গাছ তো পুরোপুরি মারা যায়।

অপরদিকে, তুলনামূলকভাবে গভীর স্তরের মাটিতে জন্মানো গাছগুলোর বৃদ্ধি অপেক্ষাকৃত ভালো ছিল। গবেষকরা মনে করেন, চন্দ্রপৃষ্ঠের উপরের স্তরে দীর্ঘদিন ধরে সৌর বিকিরণের প্রভাব পড়ায় সেখানে উদ্ভিদের জন্য পরিবেশ আরও প্রতিকূল হয়ে উঠেছে।

 

ভবিষ্যতের দিকে এক সাহসী পদক্ষেপ

এই গবেষণার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো—চাঁদের প্রকৃত মাটিতে গাছ জন্মানো সম্ভব। যদিও এটি আদর্শ পরিবেশ নয়, তবে এটি একটি প্রমাণ—জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাথমিক শর্ত চাঁদের মাটিতে তৈরি করা যেতে পারে।

 

এই সফলতা ভবিষ্যতের চন্দ্রাভিযান ও মহাকাশ বসতি গঠনের ক্ষেত্রে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। নভোচারীরা ভবিষ্যতে শুধু প্রি-প্যাকড খাবার নয়, বরং চাঁদের মাটিতে উৎপাদিত সবজিও খেতে পারবেন। দীর্ঘমেয়াদি মহাকাশ বাস বা মঙ্গলগ্রহ অভিযানের জন্য এটি এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।


প্রতিবন্ধকতার দেয়াল পেরিয়ে বিজ্ঞানের সাহসিকতা দেখিয়ে দিয়েছে—প্রাণ শুধু পৃথিবীর গন্ডিতেই সীমাবদ্ধ নয়। চাঁদের নিঃসঙ্গ ধুলোর মধ্যে যখন একটি বীজ অঙ্কুরিত হয়, তখন তা শুধু একটি উদ্ভিদের জন্ম নয়, বরং মানব জাতির কল্পনার সীমা ছুঁয়ে ফেলার এক বাস্তব পথচলা।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ