ভারতের আসামে এক মাসে ৩,৪০০ মুসলিম পরিবার উচ্ছেদ

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
ভারতের আসাম রাজ্যে বাঙালি মুসলিমদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন ও উচ্ছেদ অভিযান ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু গত এক মাসেই রাজ্যজুড়ে পাঁচটি অভিযানে অন্তত ৩ হাজার ৪০০টি মুসলিম পরিবারের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। ভোটের আগে এই দমন-পীড়নের ঘটনায় রাজ্যে গভীর মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে।
আসামের বিভিন্ন জেলায় উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলো এখন রোদে-বাদলায় নীল ত্রিপলের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। স্থানীয় প্রশাসনের অভিযোগ, তারা সরকারি জমিতে অবৈধভাবে বসবাস করছিল। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এসব পরিবারের অনেকেই বহু প্রজন্ম ধরে আসামে বসবাস করছে। তাদের জন্ম, বেড়ে ওঠা ও বসতভিটা—সবই এই রাজ্যে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপি সরকার রাজনৈতিক ফায়দা তুলতেই মুসলিমদের টার্গেট করছে। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা প্রকাশ্যেই বলছেন, ‘বাংলাদেশি মুসলিম অনুপ্রবেশকারীরা ভারতের পরিচয়কে হুমকির মুখে ফেলছে।’ অথচ বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন (CAA) অনুযায়ী মুসলিমদের নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগই নেই।
২০১৬ সালেই ভারত সরকার দাবি করেছিল, দেশে প্রায় ২ কোটি বাংলাদেশি অবৈধভাবে রয়েছে—যা আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, অতিরঞ্জিত ও প্রমাণহীন। বর্তমানে আসামের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে প্রায় ৩০ হাজার মানুষকে বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যাদের অধিকাংশই দারিদ্র্যের কারণে আইনি লড়াই চালাতে অক্ষম।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই অভিযানকে বৈষম্যমূলক ও মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যা দিচ্ছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, এটি মূলত মুসলিমবিরোধী রাষ্ট্রীয় নীতির বহিঃপ্রকাশ।
এদিকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য ২,৩৬৯ জনের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি।
বর্তমান পরিস্থিতিতে আসামসহ ভারতের বিভিন্ন স্থানে বাঙালি ভাষাভাষী মুসলিমরা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। ভোটের রাজনীতিতে তাদের অস্তিত্ব আজ বিভাজনের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।