হঠাৎ শরীর অবশ? জানুন গিলিয়ান-ব্যারে সিনড্রোমের সতর্ক সংকেত

হঠাৎ শরীর অবশ? জানুন গিলিয়ান-ব্যারে সিনড্রোমের সতর্ক সংকেত
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

হঠাৎ করেই পা ভারী লাগছে, হাত ধরে যাচ্ছে, এমনকি হাটতে গেলে বারবার পড়ে যাচ্ছেন—এগুলো কি নিছক ক্লান্তি? নাকি কোনও অজানা সংকেত দিচ্ছে আপনার স্নায়ুতন্ত্র? অনেক সময় শরীরের অভ্যন্তরে এক অদৃশ্য যুদ্ধ শুরু হয়—নিজের শরীরই আক্রমণ করে বসে নিজের স্নায়ুকে। ঠিক এমনই এক রহস্যময় ও ভয়ংকর রোগের নাম গিলিয়ান-ব্যারে সিনড্রোম (Guillain-Barré Syndrome বা GBS)।

এই রোগটি কী?

গিলিয়ান-ব্যারে সিনড্রোম একটি অটোইমিউন নিউরোলজিক্যাল ডিজঅর্ডার, যেখানে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা ভুল করে নিজের Peripheral Nervous System (পরিপার্শ্বিক স্নায়ুতন্ত্র)-কে  আক্রমণকারী ভেবে ধ্বংস করতে শুরু করে। এর ফলে স্নায়ুর আশেপাশের 'মাইলিন শিথ' ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে, শুরু হয় অবশতা।

শরীরের নিচের দিক থেকে উপরের দিকে এই অবশতা ধীরে ধীরে ছড়াতে থাকে। কিছু রোগীর ক্ষেত্রে মুখের পেশি, চোখের পাতা বা এমনকি শ্বাসযন্ত্রও আক্রান্ত হয়—যা জরুরি চিকিৎসা ছাড়া প্রাণঘাতী হতে পারে।


উপসর্গগুলো কীভাবে চেনা যাবে?

◑ হঠাৎ করে পায়ে ভারী লাগা বা অবশ ভাব

◑ হাত-পায়ে ঝিনঝিনে অনুভূতি বা অসাড়তা

◑ পেশির দুর্বলতা, হাটতে অসুবিধা

◑ মুখের পেশি বিকল হয়ে কথা বলায় সমস্যা

◑চোখ বন্ধ করতে অসুবিধা

◑কখনো কখনো শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া

 

উল্লেখযোগ্য বিষয়: এই উপসর্গগুলো সাধারণভাবে সংক্রমণের ১–৩ সপ্তাহ পর দেখা দিতে পারে। অনেক সময় সাধারণ ভাইরাল জ্বর, সর্দি, ফ্লু বা ডায়রিয়ার পরেও এটি শুরু হয়।

 

কে কতটা ঝুঁকিতে?

GBS সাধারণত ৩০ বছরের ওপরে বেশি দেখা গেলেও এটি শিশুদের মধ্যেও হতে পারে। এটি সংক্রামক নয়, তবে অনেক সময় ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ, অপারেশন কিংবা ভ্যাকসিনের প্রতিক্রিয়া হিসেবে শরীরের ইমিউন সিস্টেমের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গেলে এর ঝুঁকি বাড়ে।

 

কীভাবে নিশ্চিত হওয়া যায় এটি GBS?

সঠিক নির্ণয়ের জন্য ডাক্তাররা রোগীর নিউরোলজিক্যাল পরীক্ষা, ল্যাম্বর পাঙ্কচার (স্নায়ু তরল বিশ্লেষণ), ও নার্ভ কন্ডাকশন স্টাডির মাধ্যমে নিশ্চিত হন। কারণ অনেক সময় এটি অন্যান্য স্নায়ু রোগের সাথে মিলে যেতে পারে।

 

চিকিৎসা ও পুনরুদ্ধার – আশা আছে

গিলিয়ান-ব্যারে সিনড্রোমের চিকিৎসা অত্যন্ত সময়নির্ভর। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা পেলে রোগী ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিগুলোর মধ্যে রয়েছে:

◑ ইমিউনোগ্লোবুলিন থেরাপি (IVIG)

◑ প্লাজমা এক্সচেঞ্জ (Plasmapheresis)

◑ শ্বাসকষ্ট থাকলে ভেন্টিলেটরি সাপোর্ট

 

পুনরুদ্ধার: অধিকাংশ রোগী ৬ মাস থেকে ১ বছরের মধ্যে আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে কিছু ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদে পেশি দুর্বলতা বা ভারসাম্যহীনতা থেকে যেতে পারে।

 

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে করণীয়

দেশে এই রোগ নিয়ে এখনও ব্যাপক সচেতনতা নেই। অনেকেই শারীরিক দুর্বলতা বা অবশতাকে সাধারণ ক্লান্তি ভেবে অবহেলা করেন, ফলে সময়মতো চিকিৎসা না পাওয়ায় জটিলতা বাড়ে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে এই রোগ শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা অনেকাংশেই অনুপস্থিত।


শেষ কথা:

গিলিয়ান-ব্যারে সিনড্রোম যতটা রহস্যময়, ততটাই ভয়ানক—তবে সময়মতো চিকিৎসা শুরু হলে এটি পরাজিত করা সম্ভব। তাই হাত-পা হঠাৎ দুর্বল হয়ে এলে বিষয়টিকে কখনো হালকাভাবে নেবেন না। মনে রাখবেন, স্নায়ুর বিপরীতে এই নীরব যুদ্ধে সময়ই সবচেয়ে বড় অস্ত্র।


✪ বিশেষ পরামর্শ: নিজের শরীরের প্রতি সজাগ থাকুন। অস্বাভাবিক দুর্বলতা বা অবশতা লক্ষ্য করলেই দেরি না করে নিউরোলজিস্টের পরামর্শ নিন। আগে বুঝলেই বিপদ এড়ানো সম্ভব।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ