এত বছর পর কি নিউটন এর সূএ ভুল প্রমাণিত হলো!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
নিউটনের তৃতীয় সূত্র—"প্রতিটি ক্রিয়ার বিপরীতে সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকবে"—বিজ্ঞানীদের জন্য শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এক অটল সত্য। রকেটের তাপমাত্রায় ছুঁড়ে দেওয়া গ্যাসের বিপরীত প্রতিক্রিয়ায় সে উর্ধ্বমুখী হওয়া, কিংবা আমাদের হাঁটার সময় মাটির প্রতিক্রিয়া—সবই এই সূত্রের বাস্তব উদাহরণ। কিন্তু সম্প্রতি কিয়োটো ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক চমকপ্রদ দাবি করেছেন, মানব শুক্রাণুর চলাচল এই নিয়মকে ভেঙে দিয়েছে, অন্তত আণবিক স্তরে।
শুক্রাণুর অসাধারণ সাঁতার: শুক্রাণু যখন একটি ঘন তরলের মধ্য দিয়ে সাঁতার কাটে, আমাদের জানা ক্লাসিক্যাল পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম অনুযায়ী লেজ তরলকে বল প্রয়োগ করে এবং সেই তরলের কাছ থেকে সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আশা করা হয়। এ অনুযায়ী, তরলটি শুক্রাণুর গতিকে বাধা দেয়, গতি কমে যাওয়া উচিত। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, শুক্রাণুর গতি অনেক বেশি গতিশীল ও বাধাহীন, যা এই নিয়মের ব্যতিক্রম।
"Odd Elasticity" এর রহস্য: এই ব্যতিক্রমের রহস্য উদ্ঘাটনে গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন শুক্রাণুর লেজে একটি বিশেষ ধরনের স্থিতিস্থাপকতা, যা তারা 'Odd Elasticity' বলে অভিহিত করেছেন। অর্থাৎ, লেজে এমন একটি ক্ষমতা থাকে যা ঢেউয়ের মতো গতিতে শক্তি অপচয় না করে চলতে সাহায্য করে। এর ফলে, তারা এমন এক ধরনের
"Non-reciprocal interaction" সৃষ্টি করে—যেখানে লেজ তরলের উপর বল প্রয়োগ করলেও তরল থেকে প্রত্যাশিত বিপরীত প্রতিক্রিয়া সম্পূর্ণরূপে আসে না।
নিউটনের সূত্র কি ভুল?
অবশ্যই, নিউটনের সূত্র ভুল নয়। এটি বড়, ভারসাম্যপূর্ণ এবং ধ্রুবক গতির সিস্টেমের জন্য শতভাগ কার্যকর। তবে আণবিক বা মাইক্রোস্কেল পর্যায়ে পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মাবলী ভিন্ন। এখানে কোয়ান্টাম এবং জটিল গতিবিধি কাজ করে, যেখানে নিউটনের সাধারণ সূত্র কিছু সীমাবদ্ধতায় পড়ে।
গবেষণার বিস্তৃত প্রভাব: এই আবিষ্কার শুধু শুক্রাণুর গতিবিধি বোঝাতেই নয়, বরং জীববিজ্ঞানের কোষগত চলাচল, কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি ও ন্যানো রোবোটিক্সের মতো অত্যাধুনিক গবেষণায় বিপ্লব ঘটাতে পারে। উদ্ভাবনী কৌশলে, একদিন এমন ন্যানোযন্ত্র ডিজাইন করা সম্ভব হতে পারে যা দেহের ঘন তরলে অবাধে চলাফেরা করবে।
প্রাকৃতিক জগতে নিউটনের সূত্র বহুবর্ষের নিদর্শন হলেও আণবিক পর্যায়ে দেখা যায় নতুন বাস্তবতা। শুক্রাণুর "odd elasticity" ও "non-reciprocal interaction" বিজ্ঞানীদের বুঝতে সাহায্য করছে, প্রাচীন সূত্রের বাইরেও আছে অজানা মহল। এই গবেষণা ভবিষ্যতে জীববিজ্ঞান ও পদার্থবিজ্ঞানের মধ্যকার সীমানা আরও বিস্তৃত করবে—বিজ্ঞান এখনো অনেক কিছু শেখার অপেক্ষায়।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।