২০২৫ সালে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের নতুন মাত্রা :এডিস মশার নতুন টেকনিক্যাল প্রতিরোধ

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
এডিস মশা, যা ডেঙ্গুর প্রধান বাহক, এখনো শহর-গঞ্জ ও গ্রামাঞ্চলে সক্রিয়। তবে এ বছর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ও জনসচেতনতার নতুন দিকগুলো গুরুত্ব পাচ্ছে, যা আগের বছরের তুলনায় বেশ ভিন্ন চিত্র উপস্থাপন করছে।
এডিস মশা: শুধু কীটনাশক নয়, প্রয়োজন বহুমুখী কৌশল
পুরনো দিনে মশা দমন মূলত কীটনাশক স্প্রে ও পানির স্তর কমানোতে নির্ভর করত। কিন্তু বর্তমানে এডিস মশার কীটনাশকের প্রতি প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি যথেষ্ট কার্যকর হচ্ছে না। ফলে, গবেষকরা এখন টার্গেটেড ও টেকসই পদ্ধতির ওপর জোর দিচ্ছেন।
জীবাণু ভিত্তিক লার্ভাসাইড: পরিবেশবান্ধব সমাধান
জীবাণু প্রক্রিয়ায় তৈরি লার্ভাসাইড পানিতে প্রয়োগ করলে মশার লার্ভা ধ্বংস হয় কিন্তু অন্যান্য জলজ প্রাণীর ক্ষতি হয় না। এটি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক এবং মশার প্রজনন চক্র ভঙ্গ করে। এই পদ্ধতি গত কয়েক বছরে উন্নত ও সম্প্রসারিত হয়েছে, যা ডেঙ্গু রোগের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।
জেনেটিক মশা নিয়ন্ত্রণ: পরীক্ষামূলক প্রযুক্তি
বিজ্ঞানীরা পরীক্ষামূলকভাবে জেনেটিক্যালি মডিফায়েড পুরুষ মশা মুক্তি দিচ্ছেন, যাদের সঙ্গে মিলনের পর স্ত্রী মশারা বংশবিস্তার করতে পারে না। যদিও বাংলাদেশে এটি এখনো ব্যাপকভাবে চালু হয়নি, বিশ্বব্যাপী এটি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সম্ভাবনাময় একটি প্রযুক্তি হিসেবে গণ্য হচ্ছে।
প্রাকৃতিক উপায়: নিম, তুলসী ও অন্যান্য উদ্ভিদের শক্তি
রাসায়নিক স্প্রে না করে কিছু মানুষ বর্তমানে নিম, তুলসী, গাঁদা প্রভৃতি উদ্ভিদের নির্যাস ব্যবহার করছেন মশা তাড়ানোর জন্য। বিজ্ঞান বলছে, এই উপায়গুলি ক্ষণস্থায়ী হলেও অ্যালার্জি বা পরিবেশ দূষণ কমানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। তবে, দীর্ঘমেয়াদে এগুলো এককভাবে পর্যাপ্ত নয়।
নাগরিক অংশগ্রহণ ও স্বচ্ছ নীতি: ডেঙ্গু মোকাবিলার মূল চাবিকাঠি
গবেষণায় স্পষ্ট হয়েছে—যে এলাকায় জনগণ নিয়মিত পানি জমে থাকা স্থান পরিষ্কার করে, আবাসিক এলাকায় 'ড্রাই ডে' পালন করে, সেখানকার ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমে। সরকারের পাশাপাশি জনসাধারণের সচেতনতা ও অংশগ্রহণ ছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।
প্রযুক্তি, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য: একসাথে সমাধান
ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে লড়াই কেবল কীটনাশক ব্যবহারে সীমাবদ্ধ নয়। শহর পরিকল্পনা, জল নিস্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়ন, আবাসিক এলাকা নিয়মিত পরিদর্শন ও স্বাস্থ্য সেবা একত্রে কাজ করতে হবে। আধুনিক সেন্সর ও ডেটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে মশার বিস্তার নিরীক্ষণ করা হচ্ছে, যা সঠিক সময়ে হস্তক্ষেপ নিশ্চিত করছে।
২০২৫ সালে ডেঙ্গু মোকাবিলায় সফল হতে হলে প্রয়োজন একাধিক পন্থার সমন্বয়—বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি, প্রাকৃতিক উপায়, জনসচেতনতা এবং পরিবেশবান্ধব নীতি। শুধুমাত্র কীটনাশক ছিটানো নয়, বরং জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও সরকারের কার্যকর নীতিমালা ছাড়া এই যুদ্ধে সফলতা আসবে না।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।