স্ট্রেস অবস্থায় যেভাবে মনকে শান্ত ও সুস্থ রাখা যায়

স্ট্রেস অবস্থায় যেভাবে মনকে শান্ত ও সুস্থ রাখা যায়
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

আজকের আধুনিক জীবনে মানসিক চাপ বা স্ট্রেস এক অনিবার্য বাস্তবতা। কাজের চাপ, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, সামাজিক দায়িত্ব—সব মিলিয়ে মানুষের মনকে অসুস্থতার দিকে ঠেলে দেয়। কিন্তু সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, স্ট্রেস কমানোর জন্য একদম সহজ এবং কার্যকর এক উপায় হলো 'বই পড়া'। বইয়ের পাতায় ডুবে যাওয়া কেবল বিনোদন নয়, বরং এটি মনের জন্য এক প্রাকৃতিক থেরাপি।

গবেষকরা বলছেন, মাত্র ৬ থেকে ১০ মিনিট মনোযোগ দিয়ে পড়া শুরু করলেই মস্তিষ্কে প্রেরণা সৃষ্টি হয়, যা শরীরের স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল কমাতে সাহায্য করে। ফলে হৃদস্পন্দন ধীর হয়ে যায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং মস্তিষ্কের প্যারাসিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র সক্রিয় হয়, যা 'আরামদায়ক অবস্থা' বা রিল্যাক্সেশনের জন্য অপরিহার্য।

 

বই পড়ার মাধ্যমে মানুষের মনোযোগ একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে নিবদ্ধ হয়, যা স্ট্রেসের কারণ হিসেবে বিবেচিত অগণিত চিন্তা থেকে সাময়িক মুক্তি দেয়। একে বলা যায় মনস্তাত্ত্বিক 'ব্রেক'। বিশেষ করে গল্প, কবিতা, বা আত্মজীবনী মনের অনুভূতিকে ছুঁয়ে ওঠে, যা ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বাড়িয়ে দেয় এবং মানসিক চাপ মোকাবেলায় সহায়ক হয়।

 

এছাড়া, বই পড়ার অভ্যাস মস্তিষ্কের নিউরনাল কানেকশন শক্তিশালী করে, স্মৃতিশক্তি ও চিন্তাশক্তি বাড়ায়। নিয়মিত পড়াশোনার ফলে মস্তিষ্কের অংশগুলো আরও কার্যকরভাবে কাজ করে, যা উদ্বেগ কমাতে এবং মনকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

 

তবে বই পড়া মানেই নয় যে সব বই একই প্রভাব ফেলে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাত্যহিক জীবনের চাপ কমাতে বিশেষভাবে স্নায়বিক শান্তির জন্য মনোরম গল্প, সেল্ফ-হেল্প বই বা হালকা সাহিত্য বেশি কার্যকর। অপরদিকে খুব বেশি জটিল বা চাপ বাড়ানো তথ্যবহুল বই পড়লে স্ট্রেস বাড়তেও পারে।

একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বই পড়ার পরিবেশ। মোবাইল ফোন বা টিভির বিকৃত শব্দ, হালকা আলো—এইসব ব্যাঘাতময় উপাদান থেকে দূরে সরে নিরিবিলি পরিবেশে পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলাই সবচেয়ে বেশি উপকারী।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত দিনে অন্তত ২০ মিনিট বই পড়া অভ্যাস করলে তা ধীরে ধীরে মস্তিষ্কে একটি রিল্যাক্সেশন রুটিন তৈরি করে, যা স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টে দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর প্রমাণিত হয়। এই অভ্যাস শুধু মনকে শান্ত রাখে না, বরং মানসিক রোগ যেমন উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা থেকে রক্ষাও করে।

সুতরাং, আজ থেকেই নিজের জীবনে বই পড়ার অভ্যাসকে একটিভ করুন। স্ট্রেসমুক্ত জীবনের জন্য দামী ও জটিল ওষুধের পরিবর্তে বুকশেলফ থেকে তুলে আনুন আপনার প্রিয় বই, আর অনুভব করুন মন-মস্তিষ্কের এক অনন্য প্রশান্তি।


সংক্ষেপে, বই পড়া শুধুই বিনোদন নয়, এটি হতে পারে মানসিক চাপ কমানোর প্রাকৃতিক ও বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ