শরীরেই লুকিয়ে আছে অজানা নিজস্ব নিরাপত্তার চাবি

শরীরেই লুকিয়ে আছে অজানা নিজস্ব নিরাপত্তার চাবি
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

একটা সময় মানুষ তালা খুলত চাবি দিয়ে। এরপর এল পাসওয়ার্ডের যুগ—যেখানে অক্ষর, সংখ্যা আর প্রতীকের মিশেলে তৈরি হতো নিরাপত্তার দেয়াল। কিন্তু সাইবার হুমকি যত বাড়ছে, ততই স্পষ্ট হচ্ছে—এই দেয়াল খুবই ভঙ্গুর। এখন প্রশ্ন উঠেছে—নিরাপত্তা মানে কী শুধুই কোড? না কি নিরাপত্তা লুকিয়ে আছে মানুষের দেহেই? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আজ প্রযুক্তির সবচেয়ে শক্তিশালী উত্তর—বায়োমেট্রিক নিরাপত্তা।

বায়োমেট্রিক কী?

বায়োমেট্রিক নিরাপত্তা মানে এমন এক প্রযুক্তি, যা ব্যক্তির শারীরিক বা আচরণগত বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে পরিচয় নিশ্চিত করে। সাধারণভাবে যেসব বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করা হয়—

⇨ আঙুলের ছাপ (Fingerprint)

⇨ মুখের গঠন (Facial Recognition)

⇨ চোখের মণি বা আইরিস স্ক্যান (Iris/Retina Scan)

⇨ কণ্ঠস্বরের ছন্দ (Voice Recognition)

 

এমনকি এখন টাইপিংয়ের গতি, হাঁটার ধরণ, ফোন ধরার পদ্ধতিও ব্যবহৃত হচ্ছে (Behavioral Biometrics)।

 

যেভাবে কাজ করে-

বায়োমেট্রিক ডিভাইস বা সেন্সর ব্যবহারকারীর শরীর থেকে নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য স্ক্যান করে। এরপর এটি এক ধরনের ডিজিটাল কোডে রূপান্তর হয়, যা একটি ডাটাবেসে সংরক্ষিত থাকে। যখন ব্যবহারকারী পুনরায় প্রবেশ করতে চায়, তখন তার বায়োমেট্রিক বৈশিষ্ট্য মিলিয়ে নেওয়া হয় পূর্বের ডেটার সঙ্গে। যদি মিল পাওয়া যায়—প্রবেশ অনুমোদিত।

 

 ব্যবহার:

⇨ স্মার্টফোন আনলক থেকে শুরু করে

⇨ ব্যাংকে টাকা লেনদেন,

⇨ এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন,

⇨ অফিসে হাজিরা,

⇨ আইডেন্টিটি ভেরিফিকেশন—সবক্ষেত্রে এখন বায়োমেট্রিক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে।

 

বিশ্বের বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সরকারি নিরাপত্তা সংস্থা পর্যন্ত এখন বায়োমেট্রিক নির্ভরতায় ঝুঁকছে।


বাংলাদেশে ইতিমধ্যে এই প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে:

⇨ সীম নিবন্ধনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট

⇨ জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাইয়ে বায়োমেট্রিক ডাটা

⇨ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মী উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ

⇨ ব্যাংকে গ্রাহকের সত্যতা যাচাই

 

তবে প্রশ্ন রয়ে গেছে—এই তথ্য কতটা নিরাপদ? সঠিকভাবে সংরক্ষিত তো?

 

 ◑ ঝুঁকি 

বায়োমেট্রিক তথ্য একবার চুরি হলে তা আর পরিবর্তনযোগ্য নয়। যেমন—পাসওয়ার্ড পাল্টানো যায়, কিন্তু আঙুলের ছাপ বা চোখের গঠন বদলানো যায় না। তাই এই প্রযুক্তি যতটা শক্তিশালী, ততটাই সংবেদনশীল। একটি হ্যাকিং এর ঘটনায় কোটি কোটি মানুষের বায়োমেট্রিক তথ্য ফাঁস হলে, চিরজীবনের জন্য ঝুঁকিতে পড়তে পারে তাদের ডিজিটাল পরিচয়।


নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যা প্রয়োজন:

⇨ উন্নত এনক্রিপশন প্রযুক্তি

⇨ কড়া ডেটা প্রোটেকশন আইন

⇨ ব্যবহারকারীর সচেতনতা

⇨ এবং অবশ্যই, নিয়মিত নিরাপত্তা আপডেট


গবেষকরা এখন কাজ করছেন আরও উন্নত বায়োমেট্রিক পদ্ধতির ওপর—যেমন হৃদস্পন্দনের ধরন, ব্রেইনওয়েভ, এমনকি মানুষের ঘামের রাসায়নিক উপাদান বিশ্লেষণ করেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রযুক্তি তৈরি হচ্ছে।


আজকের নিরাপত্তা মানে আর তালা-চাবির খেলা নয়। কিন্তু সেই চাবির প্রতিকৃতি যদি ভুল হাতে পড়ে, তখন বিপদের দায় কার? তাই প্রযুক্তির ব্যবহার যেমন জরুরি, তেমনই জরুরি সচেতনতা ও আইনগত কাঠামো।

একটি বায়োমেট্রিক প্রযুক্তি আমাদের ভবিষ্যত গড়ে দিতে পারে—শুধু যদি আমরা এটিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারি।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ