পানির অভাবে নয়, সঠিক কৌশলের অভাবেই মৃত্যুর আশংঙ্কা

পানির অভাবে নয়, সঠিক কৌশলের অভাবেই মৃত্যুর আশংঙ্কা
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

পানির অভাব মানেই মৃত্যুর আশঙ্কা—এ কথা শুধু মানুষের জন্য নয়, উদ্ভিদের জন্যও প্রযোজ্য। তবে অবাক করার বিষয় হলো, গাছেরা এই চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করে তাদের নিজস্ব জীববৈজ্ঞানিক কৌশল দিয়ে। এটাই অভিযোজন—একটি প্রাকৃতিক উপায়, যার মাধ্যমে গাছ নিজেকে টিকিয়ে রাখে সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতিতেও।

পানি-সংকটে গাছ যেসব অভিযোজন কৌশল গ্রহণ করে, সেগুলো শুধু প্রাণ রক্ষার জন্য নয়, বরং বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকেও গবেষণার আকর্ষণীয় উপকরণ। নিচে তুলে ধরা হলো গাছের অভিযোজন পদ্ধতির বিস্তারিত বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ—

 

 ১. পাতার অভিযোজন-  গাছের পাতাই সাধারণত সবচেয়ে বেশি পানি হারায়। এজন্য শুষ্ক অঞ্চলের গাছগুলো পাতাকে রূপান্তর করে এমনভাবে, যাতে পানি ক্ষয় কম হয়।

ক্যাকটাসের মতো উদ্ভিদের পাতা রূপান্তরিত হয়ে কাঁটায় পরিণত হয়—ফলে ট্রান্সপিরেশন কমে যায়।

পাতায় ঘন মোমের আবরণ থাকে, যা বাষ্পীভবন রোধ করে।

স্টোমাটা নামের ছোট ছিদ্রগুলো অনেক সময় দিনে বন্ধ থাকে এবং রাতে খোলে, যাতে তাপের সময় পানি কম হারায়।

 

২. শিকড়ের অভিযোজন- পানির খোঁজে শিকড় গাছের নীচের দিকের যোদ্ধা।

⇨ গভীর শিকড়: অনেক গাছ যেমন মেসকুইট, ২০-৩০ মিটার গভীর পর্যন্ত শিকড় বিস্তার করতে পারে।

⇨ ছড়ানো শিকড়: কিছু গাছের শিকড় মাটির উপরের স্তরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, যাতে অল্প বৃষ্টির পানিও সংগ্রহ করা যায়।

 

৩. স্যাকুলেন্ট টিস্যু-

ক্যাকটাস, অ্যালোভেরা প্রভৃতি গাছের শরীরে থাকে স্যাকুলেন্ট টিস্যু—মোটা, জলভর্তি কোষ, যা খরার সময় ধীরে ধীরে পানি সরবরাহ করে।

এই কোষগুলো যেন প্রাকৃতিক পানির ট্যাংক।

গাছ নিজের দেহেই পানি জমিয়ে রাখে ভবিষ্যতের জন্য।

 

৪. CAM ফটোসিন্থেসিস- শুকনো এলাকার অনেক গাছ CAM (Crassulacean Acid Metabolism) পদ্ধতি ব্যবহার করে, যেখানে তারা রাতে কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে এবং দিনে ফটোসিন্থেসিস সম্পন্ন করে।

এতে দিনে স্টোমাটা বন্ধ থাকে এবং পানি অপচয় হয় না।এটি বিশেষ করে ক্যাকটাস, আগাভে, ও কিছু অর্কিড জাতীয় উদ্ভিদে দেখা যায়।

 

৫. বীজের ঘুম- কিছু উদ্ভিদের বীজ শুষ্ক অবস্থায় এক ধরনের ঘুমে চলে যায়, যাকে বলে বীজ সুপ্ততা।

যতক্ষণ না পানি এসে পৌঁছায়, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা অঙ্কুরিত হয় না।

এই বুদ্ধিদীপ্ত টাইমিং তাদের বাঁচিয়ে রাখে কঠিন সময় পেরিয়ে।

 

৬. পত্রজারীতা- কিছু গাছ খরার সময় নিজেদের পাতা ফেলে দেয়, যাকে বলে পত্রজারীতা বা deciduous behavior।

এতে গাছের পানি খরচ কমে যায়।

পরিবেশ অনুকূল হলে তারা আবার নতুন পাতা গজায়।

 

শুধু মানুষ নয়, গাছও জানে কীভাবে কঠিন বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে বেঁচে থাকতে হয়। গাছের এসব অভিযোজন প্রমাণ করে, পরিবেশ বদলালেও বেঁচে থাকার উপায় থাকে।

প্রকৃতি আমাদের শেখায়—সমস্যা এলেই নয়, প্রস্তুতি থাকলেই টিকে থাকা যায়।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ