অজান্তেই শরীরে ঢুকে পড়ছে প্রাণঘাতী জীবাণু, প্রতিরোধে করণীয়!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
পেটব্যথা, বমি, ডায়রিয়া কিংবা হালকা হজমের সমস্যা—প্রথমে ছোটখাটো মনে হলেও, অনেক সময় এই লক্ষণগুলোই হতে পারে এক গভীর সংকেত। বিশ্বব্যাপী ভয়াবহভাবে বাড়ছে 'ইনটেস্টাইনাল ইনফেকশন' বা অন্ত্র সংক্রমণের ঘটনা। যা শুধুমাত্র হজমের ব্যাঘাত ঘটায় না, বরং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দিয়ে দীর্ঘমেয়াদে সৃষ্টি করতে পারে ভয়ংকর স্বাস্থ্যঝুঁকি।
কী এই অন্ত্র সংক্রমণ?
ইনটেস্টাইনাল ইনফেকশন মূলত অন্ত্রনালীতে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, পরজীবী (parasite) কিংবা ফাঙ্গাস দ্বারা সৃষ্ট একধরনের সংক্রমণ। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় ছোট এবং বড় অন্ত্র—যেখানে খাদ্য হজম এবং পুষ্টি শোষণের কাজ হয়। আক্রান্ত হলে পেটে গ্যাস জমা, তীব্র ব্যথা, পাতলা পায়খানা, জ্বর, খাবারে অরুচি ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়।
যেভাবে ছড়ায়-
এই সংক্রমণের প্রধান কারণ হলো দূষিত পানি, অপরিষ্কার খাবার, অপর্যাপ্ত স্যানিটেশন ব্যবস্থা এবং ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধির অভাব। যেসব অঞ্চলে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা দুর্বল, সেখানে এই রোগের প্রকোপ বেশি। অপরদিকে, পথের ধারে খোলা জায়গায় বিক্রিত খাবার, অনিয়ন্ত্রিত অ্যান্টিবায়োটিক সেবন ও নিম্নমানের খাবারেও লুকিয়ে থাকতে পারে ভয়ঙ্কর জীবাণু।
কে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে?
⇨ শিশু ও বয়স্করা
⇨ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এমন ব্যক্তি
⇨ ডায়াবেটিস বা অন্য দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্তরা ⇨ ঘনবসতিপূর্ণ ও নিম্নস্বাস্থ্য পরিবেশে বসবাসকারীরা
বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে, একাধিকবার ডায়রিয়া হওয়া মানেই পুষ্টিহীনতা ও বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হওয়া। এমনকি অনেক সময় এটি মৃত্যুর কারণও হতে পারে।
কেন ভয়ংকর হয়ে উঠছে এই রোগ?
বর্তমানে কিছু ব্যাকটেরিয়া যেমন Shigella, Salmonella, ও E. coli এমনভাবে বিবর্তিত হচ্ছে যে, সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিক তাদের ওপর আর কাজ করছে না।
বিজ্ঞানীরা একে বলছেন "অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স"। এর ফলে সাধারণ সংক্রমণও পরিণত হচ্ছে প্রাণঘাতী রোগে।
প্রতিরোধের উপায় কী?
✔ বিশুদ্ধ পানি পান করা
✔ খাবার ভালোভাবে ধুয়ে রান্না করা
✔ প্রতিবার টয়লেট ব্যবহারের পর ও খাবার আগে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া
✔ রাস্তার খোলা খাবার এড়িয়ে চলা
✔ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক না খাওয়া
✔ শিশুর খাবার ও পানি পরিচ্ছন্নভাবে পরিবেশন করা
ভবিষ্যতের বিপদের ইঙ্গিত
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যেই সতর্ক করেছে যে, অদূর ভবিষ্যতে এই ধরণের সংক্রমণই হতে পারে মৃত্যুর শীর্ষ কারণগুলোর একটি। উন্নত দেশগুলোতে সুপেয় পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্য শিক্ষা থাকলেও উন্নয়নশীল দেশে এটি এখনো বড় চ্যালেঞ্জ।
ইনটেস্টাইনাল ইনফেকশন এখন আর শুধু পেটের অসুখ নয়—এটি স্বাস্থ্যবিধির অবহেলার ফল, যা এক সময় হয়ে উঠতে পারে বৈশ্বিক মহামারির কারণ। তাই এখনই সময় স্বাস্থ্য সচেতনতার, সাবধানতার এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টার। অন্ত্রের ভেতর লুকিয়ে থাকা এই শত্রুকে পরাস্ত করতে হলে চাই তথ্যভিত্তিক সচেতনতা, নিরাপদ খাদ্যাভ্যাস এবং আধুনিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।