অতিরিক্ত ভাবনা, বারবার একই জিনিস চেক করা, অস্বস্তিকর আচরণ!! আপনিও ভয়ংকর ওসিডিতে আক্রান্ত

অতিরিক্ত ভাবনা, বারবার একই জিনিস চেক করা, অস্বস্তিকর আচরণ!!  আপনিও ভয়ংকর ওসিডিতে আক্রান্ত
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

আপনি কি কখনও বারবার দরজার তালা চেক করেন? বারবার হাত ধুতে থাকেন, যদিও জানেন হাত পরিষ্কার? কিংবা মনে হয় কিছু ভুল করেছেন অথচ বাস্তবে তা ঘটেনি? যদি এমন অনুভূতি আপনাকে প্রতিদিন পিছু টানে, তাহলে এটিকে খেয়ালি মন ভেবে অবহেলা না করে সতর্ক হওয়া জরুরি—এগুলো হতে পারে OCD (Obsessive Compulsive Disorder)-এর প্রাথমিক লক্ষণ।

রোগ না অভ্যাস?

বহুদিন ধরেই সমাজে এই ভুল ধারণা প্রচলিত যে ওসিডি আসলে একটা খারাপ অভ্যাস বা অতি পরিচ্ছন্নতার রুচি। কিন্তু বিজ্ঞানের চোখে এটি একটি স্নায়ুবিক ও মানসিক রোগ, যেখানে ব্যক্তি নিজের চিন্তা ও আচরণের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। তাদের মস্তিষ্কে বারবার কিছু চিন্তা আসে (যাকে বলে Obsession) এবং সেই চিন্তা দূর করতে বাধ্য হন নির্দিষ্ট কিছু আচরণ করতে (যাকে বলে Compulsion)।

 

চিন্তার বৃত্তে বন্দি: কী ঘটে মস্তিষ্কে?

ওসিডির ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের একাধিক অংশে—বিশেষত orbitofrontal cortex, anterior cingulate cortex, এবং caudate nucleus—তথ্যপ্রবাহে সমস্যার সৃষ্টি হয়। ফলে, চিন্তা এবং কাজের মধ্যে ভারসাম্য নষ্ট হয়। এছাড়াও নিউরোট্রান্সমিটার যেমন সেরোটোনিন ও ডোপামিন-এর অস্বাভাবিক কার্যকারিতাও মস্তিষ্কে ওসিডির ঘূর্ণিচক্র সৃষ্টি করতে পারে।

 

লক্ষণ: 

অনেকেই ওসিডিকে কেবলমাত্র পরিচ্ছন্নতাজনিত অভ্যাস মনে করেন। তবে প্রকৃতপক্ষে ওসিডির বহুমাত্রিক রূপ আছে, যেমন:

☞ বারবার ধোয়া বা পরিষ্কার করা

☞ নির্দিষ্ট সংখ্যা বা রীতির প্রতি অতিরিক্ত টান

☞ অনিরাপত্তাজনিত চিন্তা যেমন—অপ্রীতিকর কিছু ঘটে যাবে

☞ নিজের বা অন্যের ক্ষতির ভয়

☞ বারবার একই প্রশ্ন, চিন্তা বা প্রার্থনা করা

☞ নিখুঁতভাবে সবকিছু সাজানোর তাগিদ

 

এই আচরণগুলো এমন পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে, যেখানে ব্যক্তি স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে অপারগ হয়ে পড়েন।

 

কারা বেশি ঝুঁকিতে?

ওসিডি সাধারণত কিশোর বা তরুণ বয়সে শুরু হয়, তবে শিশুকালেও এটি দেখা যেতে পারে। পারিবারিক ইতিহাস, দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ, ট্রমা এবং নিউরোলজিক্যাল জটিলতা—এসব ওসিডির সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষদের মধ্যে তা তুলনামূলক কম হলেও, মহিলাদের মধ্যে উপসর্গ কিছুটা বেশি তীব্রভাবে দেখা দেয়।


ওসিডির পরিণতি: 

অনেক সময় রোগীরা নিজের সমস্যাকে "খেয়ালখুশির" বিষয় মনে করে লুকিয়ে রাখেন। এতে একদিকে মানসিক চাপ বাড়ে, অন্যদিকে জীবনের মান কমে যায়। ওসিডি untreated থাকলে তা ডিপ্রেশন, অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার, এমনকি সোশ্যাল আইসোলেশন-এর মতো জটিলতায় রূপ নিতে পারে।


সমাধানের পথ: চিকিৎসা ও সচেতনতা

ভয়ের কিছু নেই—ওসিডির চিকিৎসা সম্ভব এবং কার্যকর। সবচেয়ে ফলপ্রসূ পদ্ধতি হলো:

◑ CBT (Cognitive Behavioral Therapy): এতে চিন্তা ও আচরণ নিয়ন্ত্রণে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

◑ ERP (Exposure and Response Prevention): রোগীকে ধীরে ধীরে ভয়ের মুখোমুখি করা হয়, এবং প্রতিক্রিয়া রোধে সহায়তা করা হয়।

◑ ঔষধ (SSRI জাতীয় অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট): সেরোটোনিন লেভেল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

তবে চিকিৎসার প্রথম শর্ত হলো—নিজে বোঝা এবং স্বীকার করা যে, এটি লজ্জার নয় বরং চিকিৎসাযোগ্য মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা।

 

সমাজ ও পরিবার যা করবে-

ওসিডি আক্রান্ত ব্যক্তির পাশে থেকে বুঝতে হবে, এটি 'খেয়াল' বা 'অভিনয়' নয়। সহানুভূতি, গ্রহণযোগ্যতা এবং সহায়তামূলক পরিবেশ এই রোগ মোকাবিলায় সবচেয়ে বড় ওষুধ।


 ওসিডি এমন এক মানসিক ফাঁদ, যা বাইরে থেকে বোঝা যায় না, কিন্তু ভিতরে এক অসীম যন্ত্রণা। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলা যত বেশি খোলা হবে, ততই এই অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়া সম্ভব। চলুন, মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিই—কারণ সুস্থ মনই সফল জীবনের ভিত্তি।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ