মস্তিষ্কের রাসায়নিক উত্তেজনাই রাগ, রাগ নিয়ন্ত্রনের গোপন কাহিনি!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
মানুষ কেন রাগে ফেটে পড়ে? এটি একটি সাধারণ প্রশ্ন, কিন্তু এর পেছনে লুকিয়ে আছে মস্তিষ্কের গভীর জটিল বিজ্ঞান। রাগ হল এক ধরনের আবেগ, যা আমাদের প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে। কিন্তু আজকের আধুনিক জীবনে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা আমাদের জন্য নানা সমস্যা ও চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
নিউরোসায়েন্স বা স্নায়ুবিজ্ঞান বলছে, রাগের কেন্দ্র হলো মস্তিষ্কের একটি ছোট অংশ 'অ্যামিগডালা'। এই অংশটি বিশেষভাবে সংবেদনশীল এবং বিপদ বা হুমকির সংকেত পেলে তা দ্রুত কাজ শুরু করে। ধরুন, কেউ হঠাৎ আপনার প্রতি অবিচার করে বা অসম্মান দেখায়, তখন অ্যামিগডালা তৎক্ষণাৎ 'সঙ্কেত প্রেরণ' করে শরীরকে প্রস্তুত করার জন্য । তখন শরীরে কর্টিসোল ও অ্যাড্রেনালিন নামের হরমোনের স্রোত বন্ধ হয়ে যায় , যা হৃদস্পন্দন বাড়ায়, রক্তচাপ বৃদ্ধি করে এবং শরীরকে যুদ্ধ বা পালানোর জন্য প্রস্তুত করে।
তবে, এখানে মস্তিষ্কের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ কাজ করে—প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স, যা আমাদের যুক্তি, সিদ্ধান্ত নেয়া ও আবেগ নিয়ন্ত্রণের কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। এই অংশটি আমাদের রাগের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখে। যখন আমরা শান্ত থাকার চেষ্টা করি বা নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে চাই, তখন এই অংশ সক্রিয় হয়। কিন্তু মানসিক চাপ, ক্লান্তি বা অতিরিক্ত উত্তেজনার কারণে প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স সঠিকভাবে কাজ করতে ব্যর্থ হলে রাগ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং আমরা সহজেই রেগে যাই।
গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক অবস্থা, জিনগত প্রভাব এবং পরিবেশগত চাপও রাগের মাত্রা নির্ধারণে ভূমিকা রাখে। দীর্ঘস্থায়ী চাপ, অব্যক্ত মানসিক কষ্ট, ঘুমের অভাব, অথবা অন্য কোনো মানসিক রোগের কারণে এই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, রাগ শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে রাগ হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, মানসিক অবসাদ ও বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই রাগকে বুঝে নিয়ন্ত্রণ করাটা খুবই জরুরি।
রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, মেডিটেশন, নিয়মিত শারীরিক কসরত এবং মানসিক চাপ কমানোর কার্যকর উপায়। মস্তিষ্কের এই জটিল রাসায়নিক প্রক্রিয়াগুলোকে সামলে নিয়ে নিজেকে শান্ত রাখা শেখা গেলে, ব্যক্তি শুধু নিজের জীবন নয়, পারিপার্শ্বিক সম্পর্কগুলোতেও সুস্থতা বজায় রাখতে পারে।
রাগের পেছনের এই বিজ্ঞান বুঝতে পারলে, আমরা কেবল নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করব না, বরং জীবনের নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতেও সক্ষম হবো।
তাই, রাগকে শত্রু না ভেবে, এটাকে বুঝে নিয়ন্ত্রণ করার হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করাই হবে মস্তিষ্কের সঙ্গে আমাদের এক গভীর সংযোগ।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।