মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় ডিজিটাল নিরাপত্তার আইনের শিকল!

মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় ডিজিটাল নিরাপত্তার আইনের শিকল!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

ইন্টারনেটের বিস্তারের যুগে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আর ডিজিটাল নিরাপত্তার মধ্যে বিরাট সংঘাত দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশে ২০১৮ সালে প্রয়োগ শুরু হওয়া ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট (ডিএসএ) এর উদ্দেশ্য ছিল অনলাইন জগতে বেড়ে চলা অবৈধ তথ্য ছড়ানো, গুজব, সাইবার অপরাধ ও ডিজিটাল হয়রানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। কিন্তু বাস্তবে এই আইনটি কতটা স্বাধীন মতপ্রকাশ রক্ষায় সক্ষম, আর কতটা হয় মতের স্বাধীনতাকে শেকলে আবদ্ধ করার হাতিয়ার?

বিশ্লেষকরা বলছেন, অনলাইনে মত প্রকাশ করা যেন কোনো কিছুর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ না হয়ে, 'রাষ্ট্রবিরোধী' বা 'মানহানি' হিসেবে প্রতিপন্ন হয়, সেটি নিয়ন্ত্রণ করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে । ডিএসএ প্রয়োগের কারণে সাংবাদিক, ব্লগার, শিক্ষার্থী ও সাধারণ নাগরিকের অনেকেই অভিযোগের মুখোমুখি হচ্ছেন, যারা শুধু নিজেদের মতামত বা সমালোচনা প্রকাশ করেছেন। এই পরিস্থিতিতে অনেকের মধ্যে 'সেলফ সেন্সরশিপ' বা নিজের মত প্রকাশে স্বয়ংসংযমের প্রবণতা বেড়েছে।

 

অপরদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানো, অবৈধ তথ্য প্রচার, ধর্মীয় উস্কানি এবং অপপ্রচার রোধের জন্য আইন থাকা অবশ্যই জরুরি। কারণ, অনিয়ন্ত্রিত তথ্যপ্রবাহ অনেক সময় সামাজিক অস্থিরতার সৃষ্টি করতে পারে এবং দেশের সুরক্ষা ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে। তাই প্রশ্ন শুধু আইন থাকা নয়, বরং আইন প্রয়োগের ন্যায়বিচার এবং সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার মধ্যকার সুষম ভারসাম্য স্থাপন।

 

বিশ্বব্যাপী গণতান্ত্রিক দেশগুলোতেও অনলাইনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আর নিরাপত্তার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার জন্য নিয়মাবলী প্রণয়ন করা হয়। বাংলাদেশকেও এ দিক থেকে আরও সুবিন্যস্ত ও স্বচ্ছ নীতিমালা গড়ে তুলতে হবে, যাতে আইনটি অপব্যবহার থেকে বিরত থাকে এবং সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ না হয়ে যায়। 

 

ডিজিটাল যুগে তথ্যপ্রবাহ যত বাড়বে, ততই জনগণের স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার সংরক্ষণে রাষ্ট্রের কঠোর দায়িত্ব থাকবে। তাই ডিজিটাল নিরাপত্তা ও মতপ্রকাশ—এই দুইয়ের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য না থাকলে অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো কেবল নিয়ন্ত্রিত 'নিরাপত্তা' হয়ে দাঁড়াবে, যা আসলেই গণতন্ত্রের গুণগত মান ক্ষুন্ন করবে।

 

পরিশেষে: ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনকে এমনভাবে গড়ে তোলা প্রয়োজন যা স্বাধীন মতপ্রকাশের পথ বন্ধ না করে, বরং এক নিরাপদ, সুষ্ঠু ও বিবেকবান অনলাইন পরিবেশ নিশ্চিত করবে। তবেই ডিজিটাল বাংলাদেশের নাগরিকরা সত্যিকারের স্বাধীনতা উপভোগ করতে সক্ষম হবে। 

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ